সমাজের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই ঘটে চলেছে নৃশংস অপরাধ। এর মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো শিশুদের ওপর হওয়া নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড। সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে একটি আবাসিক হোটেলে ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সমাজকে আবারও নাড়া দিয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তরা শিশুটির সহজ-সরলতাকে কাজে লাগিয়ে নির্মমভাবে তার জীবন কেড়ে নিয়েছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
গত ১৩ জুলাই, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর আনোয়ারা আবাসিক হোটেলে এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশুটির শরীরে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন ছিল। তদন্তে জানা যায়, শিশুটি বরিশালে যাওয়ার ট্রেনের সময় জানতে চেয়েছিল কমলাপুর রেলস্টেশনে। সেখানে সে আল আমিন নামের এক যুবকের সাথে পরিচিত হয়। আল আমিন ও তার সঙ্গী সাদ্দাম শিশুটিকে খাবার ও জুতা কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে তারা শিশুটিকে পাশবিকভাবে নির্যাতন করে এবং শেষ পর্যন্ত শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
অপরাধীদের পরিচয় ও তাদের কৌশল
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, আল আমিন একজন সিরিয়াল অপরাধী যার প্রধান টার্গেট ছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। সে বিভিন্ন রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালে ঘুরে বেড়াত এবং অসহায় শিশুদের সাথে বন্ধুত্ব করে তাদের বিশ্বাসভাজন বানাত। এরপর তাদেরকে বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করত। এই ঘটনায়ও সে একই পদ্ধতি ব্যবহার করে।
পুলিশের তদন্ত ও গ্রেফতার
ঘটনাটি প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার পর পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আল আমিন ও সাদ্দামকে শনাক্ত করা হয়। ১৮ জুলাই টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকা থেকে আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে সে তার অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। তবে এখনও সাদ্দাম পালিয়ে রয়েছে।
শিশুটির পরিচয় ও পরিবারের খোঁজ
দুঃখের বিষয় হলো, এখনও শিশুটির সঠিক পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, তার পরিবার বরিশালে থাকতে পারে। শিশুটির মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে এবং তার পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
সমাজের দায়িত্ব ও সচেতনতা
এই ঘটনা আমাদের সামনে আবারও প্রশ্ন তুলে ধরেছে—আমরা কতটা সচেতন? রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল বা জনবহুল স্থানে ঘুরে বেড়ানো অসহায় শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কে নেবে? পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
শিশু নির্যাতন রোধে করণীয়
-
সচেতনতা বৃদ্ধি: শিশুদের নিরাপত্তা সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে।
-
সামাজিক নজরদারি: অস্বাভাবিক আচরণ করা ব্যক্তিদের সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো উচিত।
-
কঠোর শাস্তি: শিশু নির্যাতনকারীদের দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহার
এই নির্মম ঘটনা আমাদের সমাজের অন্ধকার দিককে আবারও উন্মোচন করেছে। একটি শিশুর জীবন অকালে ঝরে গেলো কিছু নরপিশাচের হাতে। এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার, প্রশাসন ও সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে জামায়াত আমিরের সাথে মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎ
#শিশু_নির্যাতন_বন্ধ_করুন #সচেতন_সমাজ_গড়ে_তোলুন