বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের সুনাম রক্ষায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু অভিযান চালাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আলোচনায় এসেছে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফার নাম। অভিযোগ উঠেছে, তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হওয়ার আশায় এক সমন্বয়ক গ্রুপকে বিপুল অঙ্কের অর্থ ও চেক প্রদান করেছিলেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই দুদক তার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালায়।
কী অভিযোগ উঠেছে?
অভিযোগ অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডা. মোস্তফা উপদেষ্টা হওয়ার প্রলোভনে একদল ব্যক্তিকে ১০ লাখ টাকা নগদ অর্থ এবং ২০০ কোটি টাকার চারটি চেক প্রদান করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, যাদের কাছে তিনি চেক দিয়েছেন তারা নিজেদের “যমুনা থেকে আগত সমন্বয়ক গ্রুপ” হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। এই লেনদেনের সময় আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন এবং নিজেকে আরেফিন নামের এক সমন্বয়কের ভাই বলে দাবি করেন। তিনি সরাসরি ডা. মোস্তফার চেম্বার থেকেই চেকগুলো সংগ্রহ করেন।
অভিযুক্তের দাবি
অন্যদিকে, অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমে জানান, তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়েছে। তার দাবি, সংশ্লিষ্টরা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায় করেছে। তিনি দাবি করেন, এগুলো ছিল সিকিউরিটি চেক এবং তার অফিসে আসার সময় দু’জনের হাতে অস্ত্র ছিল। ফলে তিনি বাধ্য হয়েই চেকগুলো দিয়েছেন।
দুদকের পদক্ষেপ
দুদকের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হওয়ায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ অভিযানে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অসাধু প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জন্য ঘুষ প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তের অগ্রগতি
দুদক জানায়, প্রাথমিক তদন্তে কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে পুরো বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য অতিরিক্ত নথিপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই শেষে কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে এবং সেখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জনমনে প্রতিক্রিয়া
স্বাস্থ্য খাতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে একটি বড় হাসপাতালের সাবেক পরিচালককে ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া জনআস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অনেকেই মনে করছেন, যদি এসব অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে এটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি বড় কলঙ্ক হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত মানুষের জীবনের সাথে সরাসরি জড়িত। এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকলে রোগীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি রাষ্ট্রও বড় ধরনের সুনামহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ে। দুদকের এ অভিযান প্রমাণ করে যে, এখন আর কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সঠিক তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়, তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই আশা করছে দেশবাসী।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে বিনোদন পার্কে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট: উত্তেজনায় পুরো এলাকা