মাগুরার নৃশংস শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিটু শেখ এখন খালাস চাইছেন। সম্প্রতি তিনি হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেছেন, যা ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়ায় নতুন মোড় ঘুরিয়েছে। এই মামলা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল, এবং এখন এর আইনি লড়াই নিয়ে মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে।
আপিল আবেদন ও আদালতের আদেশ
মঙ্গলবার (১ জুলাই) হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ হিটু শেখের আপিল আবেদন গ্রহণ করেন। বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আপিল শুনানির পাশাপাশি তার অর্থদণ্ড স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন। হিটুর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন আদালতে শুনানি করেছেন।
এর আগে, গত ১৭ মে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মাত্র ২১ দিনের মধ্যে এই রায় ঘোষণা করা হয়, যা অপরাধের ভয়াবহতা ও দ্রুত বিচারের দাবিকে প্রতিফলিত করে।
মামলার পটভূমি ও আসামিদের অবস্থান
এই মামলার শিকার ছিল একটি নিরীহ শিশু, যাকে গত ৬ মার্চ মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে ধর্ষণ করা হয়। শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে, পরে ফরিদপুর ও ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হলেও ১৩ মার্চ তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে মানুষ রাস্তায় নামে।
মামলার অন্য তিন আসামি—সজীব শেখ, রাতুল শেখ ও রোকেয়া বেগম—কে আদালত খালাস দেন। তবে প্রধান আসামি হিটু শেখের বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড এখন হাইকোর্টের আপিল প্রক্রিয়ায় পরীক্ষিত হচ্ছে।
ডেথ রেফারেন্স ও আইনি প্রক্রিয়া
মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর গত ২১ মে মাগুরার ট্রাইব্যুনাল হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিশেষ আবেদন) পাঠায়। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া, যেখানে উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় পর্যালোচনা করে। এখন হিটু শেখের আপিল এই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের দাবি
এই মামলা শুধু একটি অপরাধের ঘটনা নয়, বরং এটি সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও শিশু নিরাপত্তাহীনতার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। শিশুটির মৃত্যু সারাদেশে শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল, এবং এখন আপিল প্রক্রিয়া ন্যায়বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
শেষ কথা
মাগুরার এই মামলা বাংলাদেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। হাইকোর্টের রায়ই নির্ধারণ করবে, এই নৃশংস অপরাধের জন্য আসামি কি দণ্ড পাবেন, নাকি তার সাজা হ্রাস পাবে। এই মামলার ফলাফল শুধু একটি পরিবারই নয়, গোটা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশু অধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে খালেদা জিয়ার জোরালো আহ্বান
আমাদের সমাজে কি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হচ্ছে? আপনার মতামত জানান কমেন্টে।