কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে স্তব্ধ পুরো এলাকা। একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর গ্রামের পুরুষরা গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে গেছে, ফলে এলাকা প্রায় জনশূন্য। পুলিশের ব্যর্থতায় ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো মামলা হয়নি, কোনো আসামিও আটক হয়নি।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
গত বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম (৫৩), ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)-কে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭) গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে পরিবারটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। উত্তেজিত জনতা প্রথমে বাড়িটি ভাঙচুর করে, পরে পরিবারের সদস্যদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়।
গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রাম ছাড়লেন পুরুষরা
হত্যাকাণ্ডের পর গ্রামের পুরুষরা গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পুলিশের অভিযানের ভয়ে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছে। ফলে গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে এখন শুধু নারী ও শিশুরা রয়েছেন।
মামলা দায়ের ও তদন্তের অগ্রগতি
ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরও মামলা দায়ের করা হয়নি। মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান জানান, নিহতদের পরিবারের সদস্যরা কুমিল্লা থেকে এজাহার লিখিয়ে আনবেন। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
ওসি আরও দাবি করেন, নিহত পরিবারটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ঘটনার পেছনের কারণ
স্থানীয়দের মতে, মোবাইল চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। মঙ্গলবার এক শিক্ষকের মোবাইল চুরির অভিযোগে বোরহান উদ্দিন নামে এক যুবককে মারধর করা হয়। বোরহান নিহত তাসপিয়ার স্বামীর সহকর্মী ছিলেন। পরে রোকসানা বেগম বোরহানকে উদ্ধার করতে গেলে ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া ও ব্যবসায়ী বাছির উদ্দিনের সঙ্গে বিবাদ বাঁধে।
বৃহস্পতিবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও সদস্য বাচ্চু মিয়া রোকসানার বাড়ির সামনে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রোকসানা বাচ্চু মিয়াকে চড় মারেন। এরপর উত্তেজিত জনতা রোকসানা ও তাঁর সন্তানদের ওপর হামলা চালায়।
নিহত পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য
নিহত রাসেল মিয়ার স্ত্রী মীম আক্তার অভিযোগ করেছেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের ইন্ধনে বাছির উদ্দিন নেতৃত্ব দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, “চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সমর্থনেই বাছির আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হত্যা করেছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া
ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, রোকসানার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং এলাকাবাসীর ক্ষোভের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াকে সমর্থন করেন না।
পুলিশের অবস্থান ও এলাকায় নিরাপত্তা
ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুততম সময়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
উপসংহার
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সমাজে আইনের শাসনের অবনতির চিত্র ফুটে তুলেছে। একটি পরিবারের নির্মম মৃত্যু এবং গ্রামের পুরুষদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা নিয়ে। আশা করা যায়, দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু হবে এবং নিহতদের পরিবারকে ন্যায়বিচার মিলবে।
আরও পড়ুন: গাজায় ৪৮ ঘন্টায় কি হলো! ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলা
আপনার মতামত জানান:
এই ঘটনা সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? নিচে কমেন্ট করে শেয়ার করুন। সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই ধরনের ঘটনায় সোচ্চার হওয়া জরুরি।