একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল তজুমদ্দিন
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় আবারও নারী নির্যাতনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এবার চাঁচড়া ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে এক নারী ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
রোববার (৬ জুলাই) তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিশ্চিত করেছেন যে ভুক্তভোগী নারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয়দের মতে, অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভুক্তভোগীর পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
ধর্ষণের শিকার নারীর বেদনাদায়ক বয়ান
ভুক্তভোগী নারী তার বক্তব্যে জানান, ঘটনার রাতে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে একা ছিলেন। রাতের অন্ধকারে বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় রাসেল ও গিয়াস উদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি জোরপূর্বক তার মুখ চেপে ধরে। এরপর গিয়াস উদ্দিন তাকে ধর্ষণ করে, আর রাসেল সেই ভিডিও ধারণ করে। পরে রাসেলও তাকে নির্যাতন করতে চাইলে তিনি প্রতিরোধ করে বাড়িতে ঢুকে যান।
তিনি আরও বলেন, “আমি সম্মান হারানোর ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু এখন তারা আমাকে রাস্তায় দেখলেই হুমকি দিচ্ছে। বলছে, ‘তুই যদি আমাদের কথা না শুনিস, তোকে ও তোর পরিবারকে শেষ করে দেব। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেব।'”
এমনকি, অভিযুক্তরা বিএনপি নেতা ইব্রাহিম হাওলাদারের সমর্থন পাচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। ইব্রাহিম হাওলাদার ইতিমধ্যেই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। এর আগে তিনি এক নেত্রীকে উলঙ্গ করে মারধরের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক, প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে তজুমদ্দিনে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। গত ২৮ জুনও একই উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে বিএনপির নেতাকর্মীদের দ্বারা এক নারী ধর্ষণের শিকার হন। এবার আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
তজুমদ্দিন থানার ওসি আশ্বাস দিয়েছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।
নারী নির্যাতন বন্ধে সমাজ ও প্রশাসনের ভূমিকা
এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটার পেছনে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াকে দায়ী করছেন সমাজকর্মীরা। নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
কী করা উচিত?
-
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মামলাটি দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হোক।
-
ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
-
সমাজের সকল স্তরে নারী নির্যাতনবিরোধী সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
শেষ কথা
নারী নির্যাতন কোনো সমাজেই গ্রহণযোগ্য নয়। তজুমদ্দিনের মতো ঘটনা শুধু একটি এলাকার সমস্যা নয়, এটি আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়েরই প্রতিচ্ছবি। আশা করি, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: হাসিনা-রেহানা-জয়সহ ১০০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ যে কারনে
#নারী_নির্যাতন_বন্ধ_করুন #ন্যায়বিচার_চাই