গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষে সংঘর্ষ ও হামলায় অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। স্থানীয় হাসপাতাল, পুলিশ ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিহতদের পরিচয়
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন:
-
দীপ্ত সাহা (২৫), গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা
-
রমজান কাজী (১৮), কোটালীপাড়া উপজেলার বাসিন্দা
-
সোহেল মোল্লা (৪১), টুঙ্গীপাড়ার বাসিন্দা ও মোবাইল দোকান মালিক
-
ইমন (২৪), সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার বাসিন্দা
ঘটনার বিবরণ
বুধবার বিকেলে গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ শেষে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ব্যবহার করেন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এই হামলায় জড়িত ছিলেন এবং নিরাপত্তা বাহিনী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি।
নিহতদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া
নিহত দীপ্ত সাহার চাচা জানান, দীপ্ত দুপুরে খাবার খেয়ে দোকানে যাওয়ার পথে চৌরঙ্গী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। অন্যদিকে, রমজান কাজীর বাবা কামরুল কাজী মর্মান্তিকভাবে বলেন, “আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে। সে তো কোনো দোষ করেনি। আমি এখন আমার সন্তানকে কোথায় খুঁজে পাব?”
পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা
ঘটনার পর গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের কল গ্রহণ করেননি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ আরও ৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগের ঘটনা
এনসিপির এই সমাবেশের আগেই গোপালগঞ্জে উত্তেজনা তৈরি হয়। সকালে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মো. পিয়ালকে লাঠি হাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এনসিপি নেতারা এই হামলাকে “রাজনৈতিক সহিংসতার চরম প্রকাশ” বলে উল্লেখ করেছেন। তারা সরকার ও প্রশাসনের কাছে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
উপসংহার
গোপালগঞ্জের এই ঘটনা রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার চাইছে, আর সাধারণ মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ও তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার সত্যতা উদঘাটন করা জরুরি।