গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে একের পর এক হামলা ও বন্দি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ১৭টি কারাগারে বাইরের লোকজনের হামলা এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের ফলে প্রায় ২,০০০ বন্দি পালিয়ে যান। যদিও অনেককে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়েছে বা তারা স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছেন, তবুও এখনও প্রায় ৭০০ বন্দি পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে হলি আর্টিজান হামলার মতো সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িত জঙ্গিরাও।
কারাগার হামলার পেছনের কারণ
২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কারাগারগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হয়। বন্দিরা মুক্তির দাবিতে বিদ্রোহ করে এবং বাইরে থেকে হামলাকারীরা কারাগারের নিরাপত্তা ভেঙে বন্দিদের পালাতে সহায়তা করে।
প্রধান ঘটনাগুলো
-
১৯ জুলাই, নরসিংদী কারাগার: প্রথম বড় ধরনের হামলা হয় এখানে। প্রায় ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যায়।
-
৫-৮ আগস্ট, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার: বন্দিরা গেট ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কারারক্ষীদের গুলিতে ৬ জন নিহত হন।
-
৮ আগস্ট, জামালপুর কারাগার: বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও বিদ্রোহের পর কারারক্ষীদের গুলিতে ৭ জনের মৃত্যু হয়।
-
৭ আগস্ট, কুষ্টিয়া কারাগার: শতাধিক বন্দি ফটক ভেঙে পালিয়ে যান, ২৫ কারারক্ষী আহত হন।
নিহত ও আহতের সংখ্যা
এই ঘটনাগুলোতে মোট ১৩ জন বন্দি নিহত এবং ২৮২ জন কারারক্ষী আহত হন। এছাড়া, কারাগার থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র লুটের অভিযোগও রয়েছে।
পলাতক বন্দিদের তালিকা
পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে রয়েছে:
-
৯ জন জঙ্গি (হলি আর্টিজান হামলার সাথে জড়িত)
-
৯৮ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি
-
৭০ জন বিচারাধীন জঙ্গি
এছাড়া, কারাগার থেকে ৯২টি অস্ত্র চুরি গেলেও এখনও ২৭টি উদ্ধার করা যায়নি।
নিরাপত্তা জোরদারের পদক্ষেপ
এই ঘটনাগুলোর পর কারাগার কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে:
-
কারাগারের প্রাচীর উঁচু করা হচ্ছে।
-
সিসি ক্যামেরা ও সেন্সর-ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
-
কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “পলাতক বন্দিদের গ্রেফতারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আমরা আশাবাদী, শিগগিরই তাদের ধরতে সক্ষম হব।”
সামনের চ্যালেঞ্জ
এখনও ৭০০ বন্দি পলাতক থাকায় দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো যাতে পুনরায় সক্রিয় না হতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা: উত্তেজনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
মন্তব্য:
এই ঘটনাগুলো কারাগার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ও তদারকি প্রয়োজন।
আপনার মতামত জানান:
আপনি কি মনে করেন কারাগারগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা উচিত? নিচে কমেন্টে লিখুন।