নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ। আর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জামাতে নামাজ পড়ার সময় আমরা অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলি, যা নামাজের পূর্ণতা নষ্ট করে দেয়। আজকে আমরা জামাতে নামাজ আদায়ের সময় সংঘটিত ১০টি প্রচলিত ভুল নিয়ে আলোচনা করব।
১. কাতার সোজা না করা
জামাতে নামাজের প্রথম শর্ত হলো কাতার সোজা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“তোমরা কাতার সোজা করো, নতুবা আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।” (বুখারি, হাদিস নং ৭১৭)
অনেকে কাতারে দাঁড়ানোর সময় পায়ের গোড়ালি এক লাইনে রাখে না, ফলে কাতার বেঁকে যায়। মসজিদে কাতারের জন্য যে দাগ বা লাইন টানা থাকে, সেখানে গোড়ালি স্পর্শ করেই দাঁড়ানো উচিত।
২. কাতারে ফাঁকা জায়গা রাখা
অনেক সময় দেখা যায়, কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও মুসল্লিরা পেছনের কাতারে দাঁড়ায়। রাসুল (সা.) বলেছেন,
“কাতারে কোনো ফাঁক রাখো না, কারণ শয়তান সেই ফাঁকে দাঁড়ায়।” (আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৬৬)
যদি কাতারে জায়গা থাকে, তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে কাতার পূর্ণ করা জরুরি।
৩. সামনের কাতার খালি রেখে পেছনে দাঁড়ানো
নামাজের সময় প্রথম কাতার পূর্ণ হওয়ার পরই পরবর্তী কাতার গঠন করা উচিত। কিন্তু অনেকেই সামনের কাতার ফাঁকা রেখে পেছনে দাঁড়ান, যা সুন্নাহর বিপরীত। রাসুল (সা.) বলেছেন,
“সামনের কাতার আগে পূর্ণ করো, তারপর পরের কাতার।” (আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৭১)
৪. দৌড়ে গিয়ে জামাতে শরিক হওয়া
অনেকে জামাতের সওয়াব পেতে তাড়াহুড়া করে দৌড়ে মসজিদে প্রবেশ করেন। কিন্তু রাসুল (সা.) এভাবে দৌড়ে নামাজে শরিক হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন,
“যখন নামাজের ইকামত শুনবে, তখন ধীরস্থিরভাবে এসো, দৌড়ো না।” (বুখারি, হাদিস নং ৬৩৬)
৫. রুকু না পেলে পরবর্তী রাকাতের জন্য অপেক্ষা করা
অনেকের ধারণা, রুকু পাওয়া না গেলে জামাতে শরিক হওয়া যাবে না। কিন্তু হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে—
“ইমামকে যে অবস্থায় পাও, সেভাবেই নামাজে শরিক হও এবং যা ছুটে গেছে পরে পূরণ করো।” (বুখারি, হাদিস নং ৬৩৬)
অর্থাৎ, ইমামকে সিজদায়, রুকুতে বা দাঁড়ানো অবস্থায় যেভাবেই পাও, সঙ্গে সঙ্গে শরিক হয়ে যেতে হবে।
৬. ইমামের আগে রুকু-সিজদা করা
কিছু মুসল্লি ইমামের আগেই রুকু বা সিজদা করে ফেলেন, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) সতর্ক করে বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা উঠায়, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করতে পারেন!” (বুখারি, হাদিস নং ৬৯১)
৭. সিজদায় হাত বাঁকিয়ে পাশের ব্যক্তিকে কষ্ট দেওয়া
সিজদার সময় অনেকে হাত এতটাই বাঁকিয়ে রাখেন যে পাশের মুসল্লির জায়গা সংকুচিত হয়ে যায়। এতে অন্যের নামাজে অস্বস্তি হয়। তাই সিজদায় হাত রাখার সময় পাশের ব্যক্তির সুবিধার দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
৮. ইমামের ভুল হলে লোকমা না দেওয়া
ইমামও মানুষ, তার ভুল হতে পারে। যেমন—জোহরের নামাজে তৃতীয় রাকাতে বসে গেলে বা কোনো ওয়াজিব কাজ ছুটে গেলে ইমামকে সতর্ক করতে হয়। এ জন্য “সুবহানাল্লাহ” বলতে হয়, যাকে লোকমা দেওয়া বলে। (ফতোয়ায়ে শামি ২/১৮৮)
৯. ইমাম এক সালাম ফেরানোর পরই দাঁড়িয়ে পড়া
অনেকে ইমাম প্রথম সালাম ফেরানোর পরই দাঁড়িয়ে যায়, অথচ নামাজ তখনো শেষ হয়নি। ইমাম ডানে-বামে দু’বার সালাম ফেরানোর পরই নামাজ শেষ হয়। তাই মাসবুক ব্যক্তির উচিত ইমামের দু’টি সালাম শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
১০. মোনাজাতকে নামাজের অংশ মনে করা
অনেক মসজিদে জামাত শেষে সম্মিলিত মোনাজাতের রীতি আছে। এটি ভালো কাজ, তবে এটি নামাজের অংশ নয়। সালাম ফেরানোর পর নামাজ শেষ হয়ে যায়, তাই মোনাজাতে শরিক হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
উপসংহার
জামাতে নামাজ আদায়ের সময় এই ভুলগুলো এড়িয়ে চললে নামাজের পূর্ণতা ও সওয়াব অর্জন করা যাবে। নামাজ মহান আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতের মাধ্যম, তাই এর নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে জানা ও পালন করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য।
আরও পড়ুন: আত্মশুদ্ধির পথে তিনটি বড় বাধা: কীভাবে এড়িয়ে চলবেন?
আপনার কি এই ভুলগুলোর কোনোটি করতে দেখা যায়? সচেতন হয়ে সুন্নাহ মোতাবেক নামাজ আদায় করুন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন।