রাজধানীর উত্তরায় এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় বহু শিশু ও শিক্ষার্থী গুরুতর দগ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ৫১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫ শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়নের পরই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আঘাত হানে। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ১টা ২২ মিনিটে এবং উদ্ধারকার্য শুরু করে। উত্তরা, মিরপুর, টঙ্গী ও অন্যান্য এলাকা থেকে ৯টি ফায়ার ইউনিট তৎপরতা চালায়।
আহতদের অবস্থা
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, বেশিরভাগ রোগীরই শরীরের ৫০% থেকে ৯৫% পর্যন্ত পুড়ে গেছে। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে পোড়ার পরিমাণ শতভাগ, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
কিছু গুরুতর আহত শিশু ও শিক্ষার্থী:
-
মো. তানভীর (১৪) – শরীরের ১০০% পোড়া
-
এ বি শামীম (১৪) – ৯৫% পোড়া
-
সায়েন ইউসুফ (১৪) – ৯৫% পোড়া
-
নাফিজ (৯) – ৯৫% পোড়া
-
মাহিয়া (১৫) – ৫০% পোড়া
-
রোহান (১৪) – ৫০% পোড়া
-
মকিন (১৫) – ৬২% পোড়া
এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীও আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম (৩৭) ও সুমাইয়া লরিন (৩০) অন্যতম।
চিকিৎসা ও প্রতিকূলতা
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহতদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে, তীব্র শয্যাসংকট এবং পর্যাপ্ত মেডিকেল সাপোর্টের অভাব চিকিৎসাকে কঠিন করে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৯০% এর বেশি পোড়া রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবুও চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সামাজিক সহযোগিতা ও রক্তদানের আবেদন
এই সংকটময় মুহূর্তে রক্ত ও প্লাজমা দান অত্যন্ত জরুরি। বার্ন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, আর্থিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহেও সহযোগিতা করা যেতে পারে।
দুর্ঘটনার তদন্ত ও ভবিষ্যৎ সতর্কতা
বিমান বাহিনী ও সরকার এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক ত্রুটিকে দায়ী করা হলেও বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে সঠিক কারণ জানা যাবে। এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে নগরায়নে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নীতিমালা কঠোর করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উপসংহার
এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা, যেখানে অসংখ্য শিশু ও তরুণ প্রাণ সংকটে পড়েছে। আমাদের সকলের উচিত এই মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানো। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
আরও পড়ুন: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শোক ও সমবেদনা
#প্রার্থনা_আহতদের_দ্রুত_সুস্থতার_জন্য
#সচেতনতা_ও_সহযোগিতা