বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে আলোচিত হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপন ফোনালাপের রেকর্ডিং। আল-জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ফোনালাপে কী উঠে এসেছে?
গত বছরের ১৮ জুলাই ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) কর্তৃক রেকর্ড করা এক ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি একদম। এখন লিথাল ওয়েপনস (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে।”
এছাড়াও, তিনি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের কথাও উল্লেখ করেন। যদিও সরকারি বাহিনী সে সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল, তবে ঢাকার এক চিকিৎসক আল-জাজিরাকে জানান, হাসপাতালে অস্বাভাবিক গুলির আঘাতে জখম হওয়া বহু বিক্ষোভকারীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা
এই ফোনালাপ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা ও তাঁর কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের মতে, শেখ হাসিনা জানতেন যে তাঁর ফোনালাপ রেকর্ড করা হচ্ছে, তবুও তিনি নির্দ্বিধায় এমন বিতর্কিত নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
আবু সাঈদের মৃত্যু ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বিতর্ক
রংপুরে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু এই বিক্ষোভকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল। ফোনালাপে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের চেষ্টা করতে শোনা যায়। রংপুর মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসকের দাবি, পুলিশের চাপে তাঁকে পাঁচবার প্রতিবেদন সংশোধন করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া
আওয়ামী লীগের এক মুখপাত্র আল-জাজিরাকে দেওয়া বিবৃতিতে দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা কখনোই ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দেননি। তাদের মতে, এই রেকর্ডিং “আংশিক বা বিকৃত” হতে পারে। এছাড়া, আবু সাঈদের মৃত্যুর তদন্তে সরকারের আন্তরিকতা ছিল বলেও দাবি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
উপসংহার
আল-জাজিরার এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। ফোনালাপের সত্যতা ও এর আইনি ও রাজনৈতিক পরিণতি এখন সবার নজরে। বিচারিক প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয়, তা নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চিত্র।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে উত্তেজনা: হামলায় নিহত ১২, বেসামরিক হতাহতের অভিযোগ