ডেঙ্গু এখন শুধু ঢাকা বা বড় শহরের সমস্যা নয়—গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্রই এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। চলতি বছরেই ডেঙ্গুতে ৭০ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ৬২৫ ছাড়িয়েছে। সরকারের মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ না করাই এই সংকটের মূল কারণ।
ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী:
-
মৃত্যু: ৭০ জন (নারী ৪৭.১%, পুরুষ ৫২.৯%)
-
আক্রান্ত: ১৮,৬২৫ জন (নারী ৪১.৪%, পুরুষ ৫৮.৬%)
-
সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্ত: ৪,০২০ জন
-
গ্রাম ও অন্যান্য এলাকায় আক্রান্ত: ১৪,৬০৫ জন
মাসভিত্তিক হিসাবে জুন ও জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা কেন?
১. অকার্যকর পরিকল্পনা
২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গু ছড়ালেও আজও একটি টেকসই মশা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে ওঠেনি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং কিছু পৌরসভায় সীমিত জনবল থাকলেও বাকি এলাকায় কোনো ব্যবস্থাই নেই।
২. বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির অভাব
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এখনও পুরনো পদ্ধতিতে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়, যা কার্যকর নয়।
৩. স্থানীয় সরকারের দুর্বল সমন্বয়
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেনের মতে, “করোনা মোকাবিলায় যেমন সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও তা জরুরি।” কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে কার্যকর কোনো সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়
১. বিজ্ঞানভিত্তিক মশা নিয়ন্ত্রণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার একটি ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করেছেন, যা দিয়ে এডিস মশার বিস্তার আগাম জানা সম্ভব। এই মডেল বাস্তবায়ন করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বড় সাফল্য আসতে পারে।
২. সারাদেশে মশক নিধন কাঠামো গড়ে তোলা
শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও মশা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিশেষ টিম গঠন করে নিয়মিত মনিটরিং জরুরি।
৩. জনসচেতনতা বাড়ানো
-
বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে না দেওয়া
-
মশারি ব্যবহার
-
ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া
৪. সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব
মশা নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সচেতনতা ক্যাম্পেইন ও কমিউনিটি ভিত্তিক কর্মসূচি বাড়ানো দরকার।
উপসংহার
ডেঙ্গু কোনো ঋতুগত রোগ নয়, এটি এখন একটি জাতীয় সংকট। সরকার যদি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি, সমন্বিত পরিকল্পনা ও জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়, তবেই এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অন্যথায়, প্রতি বছরই এই আতঙ্কের মুখোমুখি হতে হবে সাধারণ মানুষকে।
আরও পড়ুন: বর্তমান ভাইরাল জ্বর: আতঙ্ক নয়, সচেতনতাই প্রতিরোধের চাবিকাঠি
আপনার কী মতামত? ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আর কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? কমেন্টে জানান!