গাজায় চলমান সংঘাত ও মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি যুদ্ধবিরতি না করে এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি না দেখায়, তাহলে আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
যুক্তরাজ্যের শর্তাবলি
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক জরুরি মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ঘোষণা করেন, ইসরায়েলি সরকারকে নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে:
-
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি – ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ করতে হবে এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
-
পশ্চিম তীরে সম্প্রসারণ বন্ধ – ইসরায়েলকে পশ্চিম তীরে নতুন করে বসতি সম্প্রসারণ না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
-
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের অঙ্গীকার – ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে।
স্টারমার বলেন, “একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশাপাশি একটি নিরাপদ ইসরায়েল নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। যদি ইসরায়েল এই শর্তগুলো পূরণ না করে, তাহলে আমরা ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেব।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর আগে গত সপ্তাহে ফ্রান্সও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। বর্তমানে বিশ্বের ১৩৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব লিগসহ বিভিন্ন সংস্থা বারবার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্ত শান্তি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাশা ও ইসরায়েলের অবস্থান
ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব যুক্তরাজ্যের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে “ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সরকার এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ইসরায়েলের ডানপন্থী নেতৃত্ব অতীতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরোধিতা করে আসছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পাবে। যদি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স একযোগে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ওপরও চাপ বাড়তে পারে।
শেষ কথা
গাজায় চলমান সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয় রোধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের এই ঘোষণা শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন গতি আনতে পারে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: জুলাই হত্যাকাণ্ডের রায় বর্তমান সরকারের আমলেই হবে: আসিফ নজরুল
আপনার মতামত জানান: ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া কি শান্তি আনতে সাহায্য করবে? নিচে কমেন্টে লিখুন।