ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু অনেক সময় সন্তানের পছন্দের বিয়েতে মা-বাবার অসম্মতি দেখা দেয়। এমতাবস্থায় ইসলাম কী বলে? শরিয়তের দৃষ্টিতে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়? আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা সে বিষয়েই আলোচনা করব।
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও পিতা-মাতার মর্যাদা
ইসলামে বিয়েকে অর্ধেক দ্বীন বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“বিয়ে আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়।”
(সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৪৬)
অন্যদিকে, পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনও ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“তোমার রব আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।”
(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩)
এ থেকে বোঝা যায়, ইসলাম বিয়েকে উৎসাহিত করে, কিন্তু পিতা-মাতার অধিকারও সমান গুরুত্ব দেয়।
মা-বাবার অসম্মতিতে বিয়ে: শরিয়তের অবস্থান
যদি মা-বাবা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই সন্তানের বিয়েতে বাধা দেন, তখন ইসলামী শরিয়ত কিছু শর্তসাপেক্ষে তাদের অসম্মতিকে উপেক্ষা করার অনুমতি দেয়।
কখন মা-বাবার অসম্মতি অগ্রাহ্য করা যাবে?
১. যদি বিয়ে ফরজ বা ওয়াজিব পর্যায়ের হয় (যেমন: হারাম কাজ থেকে বাঁচার জন্য বিয়ে জরুরি)।
২. যদি মা-বাবার আপত্তি অযৌক্তিক হয় (যেমন: শুধু বংশ বা গোত্রের অজুহাত দেখানো)।
৩. পাত্র বা পাত্রী শরিয়তসম্মত হলে (ধার্মিক, চরিত্রবান ও সামর্থ্যবান)।
৪. সন্তান বিয়ের উপযুক্ত হলে (শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত)।
ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন,
“যদি বিয়ে ফরজ বা ওয়াজিব হয় এবং পিতা-মাতার আপত্তি অযৌক্তিক হয়, তবে তাদের মত অগ্রাহ্য করা যাবে।”
(আল-মাজমু, ১৬/৩৪২)
মা-বাবার অসম্মতিতে বিয়ে করলে করণীয়
১. নম্রভাবে আলোচনা করা: মা-বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করুন, কেন এই বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২. আলেম বা বয়োজ্যেষ্ঠদের সহায়তা নেওয়া: পরিবারের সম্মানিত সদস্য বা কোনো ইসলামিক স্কলারকে মধ্যস্থতা করতে বলুন।
৩. দারুল ইফতায় পরামর্শ নেওয়া: জটিল পরিস্থিতিতে স্থানীয় ইসলামিক ফতোয়া কাউন্সিলের সহায়তা নিন।
৪. বিয়ের পরও সম্পর্ক বজায় রাখা: বিয়ে হয়ে গেলেও মা-বাবার সাথে সদাচরণ অব্যাহত রাখুন।
সতর্কতা ও পরামর্শ
✅ অর্থনৈতিক সক্ষমতা: বিয়ের আগে আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি।
✅ অবাস্তব আবেগ এড়ানো: শুধু ভালোবাসার ভিত্তিতে বিয়ে না করে শরিয়তের শর্ত পূরণ করুন।
✅ মা-বাবার হক আদায়: বিয়ের পরও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন, দোয়া নিন।
❌ অবৈধ বিয়ে থেকে সতর্ক থাকুন: কোনো হারাম সম্পর্ক বা শরিয়তবিরোধী শর্তে বিয়ে করবেন না।
উপসংহার
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম, কিন্তু পিতা-মাতার সন্তুষ্টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি তাদের আপত্তি অযৌক্তিক হয় এবং শরিয়তের শর্ত পূরণ হয়, তবে সন্তানের জন্য বিয়ে করা বৈধ। তবে সর্বদা নম্রতা ও সম্মান বজায় রেখে চলতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুন: জামায়াতে নামাজ আদায়ের সময় যে ১০টি ভুল আমরা প্রায়ই করি
তথ্যসূত্র:
-
সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩
-
সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৪৬
-
আল-মাজমু, ইমাম নববী (১৬/৩৪২)
-
ফতোয়ায়ে আলমগিরি, ১/২৯৬
-
রদ্দুল মুহতার, ৩/৫৮