জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) নির্মাণাধীন একটি ছাত্র হলের ভবনের ছাদ ধস ঘটনায় ১২ শ্রমিক আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলমান ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণকাজের সময়।
ঘটনার বিবরণ
নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় কংক্রিট ঢালাইয়ের সময় ছাদের সাটারিং (সাপোর্ট স্ট্রাকচার) ভেঙে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে কাজ শুরু হওয়ার পর দুপুরে বৃষ্টির কারণে কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল। বৃষ্টি শেষে কাজ পুনরায় শুরু হলে হঠাৎ সাটারিং দুর্বল হয়ে ধসে পড়ে এবং নিচে থাকা শ্রমিকরা চাপা পড়েন।
আহত শ্রমিকদের দ্রুত উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ৯ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও গুরুতর আহত ৩ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনাটির তদন্তে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান। রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান জানান, “দুর্ঘটনার কারণ ও দায়িত্ব নির্ধারণে তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী মো. রাহাত হাসান দিদার দাবি করেন, “সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী ছিল, বৃষ্টিই মূলত দায়ী।”
প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মোফাছিরুল ইসলামের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনে পাওয়া যাননি।
নির্মাণ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
এ ধরনের দুর্ঘটনা নির্মাণশিল্পে নতুন নয়। বাংলাদেশে প্রায়ই নির্মাণাধীন ভবনের ধস, শ্রমিক আহত বা নিহতের ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্মাণ কাজে মানসম্মত উপকরণ ব্যবহার, নিয়মিত তদারকি এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
পরবর্তী পদক্ষেপ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, অন্যান্য নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হবে।
এই ঘটনা নির্মাণ খাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা আবারও তুলে ধরেছে। আশা করা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট: রিয়াদের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার ৩ লাখ টাকা
সংবাদটি সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট সেকশনে।