পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সোনারঘোপ রমেশচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্ক এবং তার পরবর্তী তদন্তের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোন্দকার জসিম আহমেদ।
কী ঘটেছিল মূলত?
ঘটনাটি শুরু হয় গত ৩ আগস্ট। সেদিন শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিন নিজ অফিস কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানান। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের কিছু ব্যক্তি ও স্থানীয়ভাবে ভিন্নমত দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও সরেজমিন তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তিনি আরও বলেন, “তদন্ত এখনও চলছে। যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি প্রটোকল বা সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছেন, তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার সম্ভাবনাও রয়েছে।”
অভিযুক্ত শিক্ষিকার প্রতিক্রিয়া
ঘটনার ব্যাপারে শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তার মোবাইল ফোনে তার স্বামী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “আমার স্ত্রীর কাছে ফোন করে বলা হয়েছিল যে অফিস থেকে একটি চিঠি আছে, সেটি সংগ্রহ করতে হবে। বরখাস্তের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি।”
শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিন পূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। আমার বাবা মইনউদ্দীন মাস্টার দেশকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি তার ছবি টানিয়েছি। এটি ছিল একটি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ, যা কোনো সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে যায়নি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণের বিষয়ে আমাকে কোনো চিঠি বা মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
এই বরখাস্তের ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই নেছারাবাদসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ একে স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ রাজনৈতিক প্রভাব বলেও দাবি করছেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ শিক্ষিকার উদ্যোগকে প্রশংসা করে বলছেন, “এটি ছিল এক মহৎ প্রয়াস।”
শিক্ষক সমাজও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে—একাংশ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও, অন্য একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে এবং তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
উপসংহার
বাংলাদেশে জাতির জনকের ছবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা বাধ্যতামূলক—এমন একটি নির্দেশনা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তবে, একটি ছবি টানানোকে কেন্দ্র করে একজন শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্ত এবং তা ঘিরে জনমনে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা এবং পেশাগত দায়িত্ব—এই তিনের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর: কতজন আওয়ামী লীগ গ্রেফতার