রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দুই নারীর ওপর যৌন সহিংসতার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্ল্যাটে সংঘটিত এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী এক নারী থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার বিবরণ
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট (বুধবার) দুপুরে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১০/বি রোডের একটি বহুতল ভবনের চতুর্থ তলা থেকে অভিযুক্ত চার ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ওই সময় ফ্ল্যাট থেকে দুই ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করা হয়, যারা চাকরির আশায় সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।
মামলার এজাহারে এক নারী জানান, শহীদ মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক ব্যক্তি তাকে ফোনে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং পরে নিজের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আরও কয়েকজন পুরুষ ছিলেন, যাদের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
ভয়ংকর প্রলোভনের ফাঁদ
ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি তাকে বলেন, চাকরি পেতে হলে হয় টাকা দিতে হবে অথবা তার শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। এমন আপত্তিকর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর তিনি দেখতে পান, আরেক নারীও একইভাবে চাকরির লোভে পড়ে একই বাসায় এসেছেন এবং তাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
তৎপর পুলিশ উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের
পরিস্থিতির অবনতি দেখে এক নারী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিন অভিযুক্তকে আটক করে এবং পরে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয়
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—
-
বাবুল সরকার (৫০), ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বাসিন্দা
-
আবুল কাদের (৬০), কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার
-
রিপন মিয়া (৩৫), শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার
-
রাম গোপাল (৪০), উত্তরার বাসিন্দা
তাদের মধ্যে বাবুল ও রিপন বর্তমানে তুরাগ থানাধীন এলাকায় বসবাস করেন।
পুলিশের বক্তব্য
ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রহিম মোল্লা গণমাধ্যমকে জানান, “একই ভবনের দুটি কক্ষে পৃথকভাবে দুই নারীকে আটকে রেখে যৌন সহিংসতা চালানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
উপসংহার
এই ধরনের অপরাধ সমাজে নারী নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, সমাজকে আরও সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে যেন আর কোনো নারী এ ধরনের প্রতারণার শিকার না হন। পাশাপাশি, চাকরি বা অন্য কোনো প্রলোভনের ফাঁদে পা দেওয়ার আগে সকলকেই সাবধানতা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না’ — চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের গুরুত্বপূর্ন বার্তা