বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার। তাঁর মতে, অস্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে এ ধরনের প্রযুক্তি ও প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার।
শনিবার সকাল ১০টায় রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি এ কথা বলেন। সভায় আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ
সিইসি বলেন, অতীতে দায়িত্ব পালনের ঘাটতির কারণে ভোটের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে গেছে। অনেক ভোটার এখন আর ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নন; বরং মনে করেন, তাঁদের ভোট যেভাবেই হোক কেউ না কেউ দিয়ে দেবে। এই মানসিকতা পরিবর্তন করে ভোটারদের সক্রিয়ভাবে কেন্দ্রে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং পোলিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।
সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ রাখতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন সিইসি। তিনি বলেন, পেশাদার সাংবাদিকরা—হোক তা প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়া—নির্বাচনকে স্বচ্ছ রাখতে সহায়তা করতে পারেন। তবে তথ্য যাচাই ছাড়া কোনো খবর বা কনটেন্ট শেয়ার না করার আহ্বান জানান তিনি।
এআই ও সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার: নতুন হুমকি
সিইসি সতর্ক করে বলেন, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এআই ও সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার নতুন ধরনের হুমকি হয়ে উঠেছে। মিথ্যা তথ্য, ভুয়া প্রচারণা এবং বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় বাধা হতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাংবাদিকসহ সব সচেতন নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে সতর্কতা
আগের নির্বাচনে অনিয়মে জড়িত প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার এবং শিক্ষকদের বিষয়ে সিইসি বলেন, তাঁদের যথাসম্ভব দায়িত্বে না রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, দেশের মানুষের মাধ্যমেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে, তাই কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টনে পরিবর্তন আনা হতে পারে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা
শেষে সিইসি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশের মানুষ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ড: স্বাধীনের জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি: র্যাবের বক্তব্য