সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের নাগপুরে একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এক স্বামী তার মৃত স্ত্রীর দেহ মোটরসাইকেলে বেঁধে নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন। এই ঘটনাটি শুধু একটি দুর্ঘটনার চেয়েও বেশি কিছু বলছে—এটি আমাদের সমাজের নিষ্ঠুর বাস্তবতা এবং মানবিক সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে।
কী ঘটেছিল সেই রাতে?
গত ৯ আগস্ট, অমিত বুমরা যাদব (৩৬) এবং তার স্ত্রী জ্ঞ্যায়ার্সি যাদব (৩৫) মধ্যপ্রদেশের কারানপুর গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পিছন থেকে একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। প্রচণ্ড আঘাতে জ্ঞ্যায়ার্সি বাইক থেকে ছিটকে পড়েন এবং ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। অমিতও আহত হন, তবে গুরুতর নয়।
কেন মৃতদেহ নিয়ে বাইক চালালেন অমিত?
দুর্ঘটনার পর অমিত আশেপাশের লোকজনের কাছে সাহায্য চান, কিন্তু ভারী বৃষ্টি ও রাতের অন্ধকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা পুলিশ সহায়তা পেতে ব্যর্থ হয়ে, তিনি নিজেই স্ত্রীর মৃতদেহ বাইকে বেঁধে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ তিনি একাকী এই করুণ যাত্রা করেন।
পরে পুলিশ ভিডিও দেখে তাকে শনাক্ত করে এবং খুমারি টোল প্লাজায় থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অমিত থামেননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা
নাগপুর গ্রামীণ পুলিশ সুপার হর্স এ পোদ্দার জানান, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ইন্দিরা গান্ধী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, তবে ট্রাক চালক এখনো আটক হয়নি।
এ ঘটনা কেন আলোচিত?
এই ঘটনা শুধু একটি সড়ক দুর্ঘটনার গল্প নয়, এটি আমাদের সমাজের অন্ধকার দিককেও উন্মোচন করে:
-
মানবিক সহানুভূতির অভাব: রাস্তায় আহত মানুষকে সাহায্য না করার মানসিকতা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা এই ঘটনা প্রমাণ করে।
-
সড়ক নিরাপত্তার অবহেলা: ভারতে প্রতিদিন শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, কিন্তু দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশ সহায়তার অভাব রয়েছে।
-
মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা: ভিডিও ভাইরাল না হলে হয়তো এই ঘটনা চাপা পড়ে যেত।
শেষ কথা
অমিতের এই করুণ যাত্রা আমাদের সবার মনে একটি প্রশ্ন রেখে যায়—আমরা কি আসলেই মানবিক? নাকি নিজেদের স্বার্থে এতটাই ব্যস্ত যে বিপদে পড়া মানুষকে সাহায্য করার সময়ও নেই? এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সবারই উচিত আরও বেশি সচেতন ও সহমর্মী হওয়া।
আপনার কী মনে হয়? নিচে কমেন্টে জানান। এই ধরনের ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
আরও পড়ুন: হাজী সেলিমের পুত্র সোলায়মান সেলিমের ৩ দিনের রিমান্ড