প্রধান আসামির জামিনে রায়হানের মায়ের বেদনাদায়ক প্রশ্ন
সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক এসআই আকবর হোসেন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তার মুক্তি পাওয়ার খবরে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া। রায়হানের মা সালমা বেগম, যিনি পাঁচ বছর ধরে ছেলের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন, আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে অঝোরে কেঁদে বলেছেন, “এটা কেমন বিচার?”
কী হয়েছিল রায়হান হত্যাকাণ্ডে?
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর রাতের নির্মম ঘটনা। সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কাস্টঘর থেকে ধরে আনা হয় রায়হান আহমদকে। পুলিশ সদস্যরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। প্রথমে ছিনতাইকারী বলে গুজব ছড়ানো হলেও, নির্যাতনের ভয়াবহ দৃশ্য প্রকাশ পেলে জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশ। পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে আসে সত্য – রায়হানকে পুলিশ সদস্যরাই পিটিয়ে হত্যা করেছে।
৫ বছর ধরে চলছে বিচার প্রক্রিয়া, কিন্তু আসামিরা জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছেন
ঘটনার পর রায়হান হত্যা মামলায় ৬ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সাবেক এসআই আকবর হোসেন ছিলেন প্রধান আসামি। পাঁচ বছর ধরে মামলাটি আদালতে চললেও, সম্প্রতি একে একে আসামিরা জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
-
এএসআই আশেক এলাহী (বর্তমানে কারাগারে)
-
কনস্টেবল হারুন অর রশিদ (জামিনে মুক্ত)
-
টিটু চন্দ্র দাস (জামিনে মুক্ত)
-
এসআই মো. হাসান উদ্দিন (জামিনে মুক্ত)
-
এসআই আকবর হোসেন (সর্বশেষ জামিনে মুক্ত)
-
সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (পলাতক, বিদেশে অবস্থানরত)
“খুনিরা জামিন পাচ্ছে, এটা কেমন বিচার?” – মায়ের কান্না
সালমা বেগম বলেন, “আগের সরকারে একজনও জামিন পায়নি। এখন সবাই জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। পিপি সাহেব বলেছিলেন, প্রধান আসামি কখনো জামিন পাবে না। কিন্তু আজ সে-ই জামিন পেয়ে বেরিয়েছে!”
তিনি আরও বলেন, “সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যেই আসামিরা জামিন পেয়ে গেল। এটা কি ন্যায়বিচার?”
আইনজীবীদের অভিমত: বিচারে দীর্ঘসূত্রতা ও জামিনের প্রভাব
মামলার আইনজীবীরা জানান, আসামিপক্ষ বারবার আদালত পরিবর্তন ও নথি জামিনের আবেদন করে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করেছে। যদিও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে, তবুও জামিনের ফলে নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সিলেটবাসীর দাবি: দ্রুত ন্যায়বিচার চাই
রায়হান হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছে সিলেটের মানুষ। কিন্তু আসামিদের জামিনে মুক্তি বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সালমা বেগমের কষ্ট এখন লক্ষাধিক মানুষের কষ্ট। তার একটাই প্রশ্ন – “আমার ছেলের হত্যার বিচার কি হবে?”
শেষ কথা
রায়হান হত্যা মামলা শুধু একটি ফৌজদারি মামলা নয়, এটি ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের প্রতীক। প্রধান আসামিদের জামিনে মুক্তি বিচার ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের আস্থাকে নাড়া দিয়েছে। আশা করা যায়, আদালত দ্রুততম সময়ে সঠিক রায় দেবে এবং রায়হানের মা সালমা বেগমের কষ্টের প্রতিবাদে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: মৃত স্ত্রীকে নিয়ে বাইক চালালেন স্বামী: এক হৃদয়বিদারক ঘটনার গভীরে
#রায়হানহত্যামামলা #সিলেট #ন্যায়বিচার #সালমাবেগম #আইনেরশাসন