দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক কথাই বলে ফেলি, কিন্তু সব কথা সুচিন্তিত বা গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামে কথার শিষ্টাচার ও সতর্কতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদেরকে এমন কিছু শব্দ ও বাক্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, যা নৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনুচিত। আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা রাসুল (সা.)-এর নিষিদ্ধ কিছু কথা নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো এড়িয়ে চলা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. নিজেকে নিকৃষ্ট বা নোংরা বলা
রাসুলুল্লাহ (সা.) “খাবুসাত নাফসি” (আমার নফস নোংরা) বলতে নিষেধ করেছেন। এর পরিবর্তে “লাকিসাত নাফসি” (আমার নফস দুর্বল) বলার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, “খাবুসাত” শব্দটি অতিরিক্ত নেতিবাচক ও অশালীন অর্থ প্রকাশ করে।
২. ধ্বংস বা বিনাশের কথা বলা
কেউ যদি বলে, “মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে” বা “সময় খারাপ হয়ে গেছে”, তবে রাসুল (সা.) এ ধরনের কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি এ কথা বলে, সে যেন নিজেই সবকিছু ধ্বংস করে দিল।” (মুসলিম)
৩. আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করা
“আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।” (আবু দাউদ)
এমনকি “যদি আমি এ কাজ করি, তাহলে আমি ইহুদি হয়ে যাব”—এ ধরনের শর্তযুক্ত শপথ করাও নিষিদ্ধ।
৪. বাদশাহ বা শাসককে অতিরঞ্জিত উপাধি দেওয়া
নবীজি (সা.) “মালিকুল মুলক” (রাজাদের রাজা) বলা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কারণ, প্রকৃত রাজত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর।
৫. গালমন্দ বা অভিশাপ দেওয়া
-
বাতাস, জ্বর বা প্রাণী (যেমন মোরগ) কে গালি দেওয়া নিষেধ।
-
কোনো মুসলিমকে গালি দেওয়া কবিরা গুনাহ।
-
স্বামী-স্ত্রীর গোপন বিষয় অন্যের কাছে প্রকাশ করাও নিষিদ্ধ।
৬. অহংকারী শব্দ ব্যবহার করা
“আমি”, “আমার”, “আমার মালিকানায়”—এ ধরনের শব্দ অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ইবলিস, ফেরাউন ও কারুনের পতনের পেছনে এই অহংকারই দায়ী ছিল।
৭. আল্লাহর ইচ্ছার উপর শর্তারোপ করা
“হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো”—এভাবে অনিশ্চিতভাবে দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। বরং দৃঢ়ভাবে ও বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
৮. অহেতুক প্রশ্ন ও গীবত
-
কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে (যেমন, “তুমি কেন তোমার স্ত্রীকে মারো?”) অপ্রয়োজনে জিজ্ঞাসা করা নিষেধ।
-
তিনজনের মধ্যে দুজন গোপনে আলোচনা করাও অনুচিত, কারণ এটি তৃতীয় ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়।
৯. নিজের ইবাদতের কথা বড়াই করে বলা
“আমি সারা রমজান রোজা রেখেছি” বা “আমি সারা রাত তাহাজ্জুদ পড়েছি”—এভাবে নিজের আমলের কথা প্রকাশ্যে বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১০. সম্পদ নষ্টের কথা বলা
“আমি এত টাকা নষ্ট করেছি” বা “আমি অনেক সম্পদ খরচ করেছি”—এ ধরনের কথা বলা অনুচিত, কারণ সম্পদ আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত।
উপসংহার
কথার শক্তি অপরিসীম। একটি শব্দ সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে, আবার গড়তেও পারে। মহানবী (সা.) আমাদেরকে শব্দচয়নে সতর্ক থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। আসুন, আমরা তাঁর সুন্নাহ মেনে চলি এবং এমন সব কথা পরিহার করি, যা ইসলামের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।
আরও পড়ুন: আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ: সচেতনতার গুরুত্ব
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক কথা বলার তাওফিক দিন। আমিন।