দোয়া: আল্লাহর দরবারে হৃদয়ের আকুতি
দোয়া শুধু কিছু শব্দের পুনরাবৃত্তি নয়, এটি হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত এক আন্তরিক প্রার্থনা। দোয়ার মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে, নিজের দুর্বলতা ও চাহিদা প্রকাশ করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আমি তো নিকটেই আছি, প্রার্থনাকারী যখন আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দেই।” (সুরা বাকারা: ১৮৬)
দোয়া ইমানের প্রকাশ, তাওয়াক্কুলের নিদর্শন এবং আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম মাধ্যম। আজ আমরা এমন একটি দোয়া সম্পর্কে জানবো, যা একসাথে ক্ষমা, প্রশস্ততা ও বরকতের দুয়ার খুলে দেয়।
ক্ষমা, প্রশস্ততা ও বরকতের দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি পরিপূর্ণ দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, যা নিম্নরূপ:
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ، وَوَسِّعْ لِيْ فِيْ دَارِيْ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا رَزَقْتَنِيْ
“হে আল্লাহ! আমার গুনাহ ক্ষমা করুন, আমার আবাসস্থল প্রশস্ত করুন এবং আমার রিজিকে বরকত দান করুন।”
এই দোয়াটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন,
“হে আল্লাহর রাসুল! আমি গত রাতে আপনার দোয়া শুনেছি এবং এটি আমার মনে গেঁথে গেছে। আপনি বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার গুনাহ ক্ষমা করুন, আমার আবাসস্থল প্রশস্ত করুন এবং আমার রিজিকে বরকত দান করুন।'”
রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি মনে করো যে, এই দোয়ায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়েছে?” (সুনানে তিরমিজি: ৩৫০০)
দোয়াটির তিনটি মূল বিষয়
১. গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা
প্রতিদিনের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়া একজন মুমিনের অন্যতম কর্তব্য। রাসুল (সা.) বলেছেন,
“হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, আমি দিনে একশ’ বারও তাওবা করি।” (সহিহ মুসলিম: ২৭০২)
গুনাহ মাফের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত নেমে আসে, অন্তর পরিশুদ্ধ হয় এবং ইবাদতের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
২. আবাসস্থল বা জীবনের প্রশস্ততা
এই দোয়ায় “দার” শব্দটি শুধু ঘর বা বাসস্থানকেই নির্দেশ করে না, বরং এটি জীবনের সকল ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে—স্বাস্থ্য, সময়, সামর্থ্য, পারিবারিক শান্তি ও সামাজিক সম্পর্ক। আল্লাহর কাছে প্রশস্ততা চাওয়ার অর্থ হলো, জীবনের সকল সংকীর্ণতা দূর করে সহজ-সরল পথের সন্ধান লাভ করা।
৩. রিজিকে বরকত কামনা
বরকত শুধু সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি নয়, বরং তা হলো আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার ও তাতে তৃপ্তি লাভ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আমি যাকে ইচ্ছা সচ্ছলতা দান করি আর যাকে ইচ্ছা সীমিত রিজিক দেই।” (সুরা সাবা: ৩৬)
অল্পতেই সন্তুষ্টি, হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং হালাল রিজিকের অনুসন্ধান—এসবই বরকতের অংশ।
কখন এই দোয়া পড়বেন?
-
সকাল-সন্ধ্যায়: দৈনন্দিন আমলের অংশ হিসেবে।
-
কষ্ট বা সংকটের সময়: আল্লাহর সাহায্য কামনায়।
-
নামাজের পর: বিশেষ করে তাসবিহ ও ইস্তেগফারের সময়।
উপসংহার
এই দোয়াটি সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত শক্তিশালী। এটি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ধারণ করে। নিয়মিত এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও বরকত জীবনে প্রবাহিত হতে থাকে।
আরও পড়ুন: মহানবী (সা.)-যা বলতে নিষেধ করেছেন
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই দোয়া নিয়মিত পড়ার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের জীবনে এর বরকত প্রকাশ করুন। আমিন।