বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর প্রস্তাবনা নিয়ে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রণীত এই সনদের খসড়া গতকাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে সংবিধান সংশোধন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচনী সংস্কার ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবনার ১০টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) জানিয়েছে।
জুলাই সনদের মূল প্রস্তাবনা
জুলাই সনদ ২০২৫-এর খসড়ায় মোট ৮টি অঙ্গীকারনামা এবং ৮৪টি প্রস্তাবনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
-
সংবিধানের ওপর জুলাই সনদের প্রাধান্য: এই সনদের বিধানগুলো সংবিধানের চেয়ে প্রাধান্য পাবে এবং এর বৈধতা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
-
২৪-এর গণ অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি: ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
-
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা: জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
-
প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান: প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান পদে থাকতে পারবেন না।
-
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল: ত্রয়োদশ সংশোধনীর আদলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
-
সাংবিধানিক পদে নিয়োগ পদ্ধতি: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সংস্থায় বাছাই কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আপত্তি
বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও এনডিএম এই সনদের ১০টি প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের প্রধান আপত্তিগুলো হলো:
-
প্রধানমন্ত্রীর দলীয় পদ বহাল রাখা: বিএনপি মনে করে, প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধানও হতে পারবেন।
-
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়া: বিএনপি চায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকুক।
-
উচ্চকক্ষে নারী কোটা: উচ্চকক্ষে ১০% নারী প্রার্থী বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বিএনপি।
-
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হ্রাস: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কমানোর বিরোধিতা করেছে তারা।
-
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতি: ন্যায়পাল, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থায় বাছাই কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের প্রস্তাব তারা মানতে নারাজ।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ আলোচনা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফা আলোচনা করবে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের আপত্তিগুলো সমাধান না হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে।
উপসংহার
জুলাই সনদ ২০২৫ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের একটি বড় পদক্ষেপ। তবে বিএনপি ও অন্যান্য দলের আপত্তি এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে। সকল পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে কোচিং সেন্টারে অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধার: সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত