কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় এক শোকাবহ ঘটনা
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা এলাকায় এক বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীকে বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং পুলিশি তদন্ত চলছে।
ঘটনার বিবরণ
গত ১১ আগস্ট, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভুক্তভোগীর নিজ বাসায় এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম (স্থানীয় নুরুল হুদা প্রকাশের ছেলে) ইমু অ্যাপের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর সাথে পরিচিত হয় এবং প্রায় ২০ দিন ধরে তার সাথে যোগাযোগ রাখে। বিয়ের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সে তরুণীকে প্রতারণার জালে ফেলে।
ওই রাতে আরিফুল ইসলাম ভুক্তভোগীর বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে। চিৎকার ও হট্টগোল শুনে ভুক্তভোগীর পিতা বাদশা মিয়া দরজা ভেঙে অভিযুক্তকে নগ্ন অবস্থায় আটক করেন। স্থানীয়রা জড়ো হলে সমাজ সর্দার রফি আলম বিচারের দায়িত্ব নেন এবং আরিফুলকে তার জিম্মায় নিয়ে যান।
মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া
পরবর্তীতে রফি আলম অভিযুক্তকে ছেড়ে দেন এবং পালিয়ে যাওয়ার কথা জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাদশা মিয়া ১৫ আগস্ট পেকুয়া থানায় আরিফুল ইসলাম ও রফি আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগীর পিতার বক্তব্য:
“আমার তিন মেয়েই বাকপ্রতিবন্ধী। আরিফুল আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমি ন্যায়বিচার চাই। সমাজ সর্দার রফি আলম আমাদের ঠকিয়েছে।”
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় ইউপি সদস্য হোসাইন শহিদ সাইফুল্লাহ বলেন,
“আমি ঘটনাটি জানার পর ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনি সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এমন অপরাধের বিচার অবশ্যই আদালতে হওয়া উচিত।”
অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সমাজ সর্দারের বিতর্কিত বক্তব্য
সমাজ সর্দার রফি আলম দাবি করেন,
“দুই পক্ষের সম্মতিতে বৈঠক হয়েছিল। ভুক্তভোগীর পরিবার প্রথমে রাজি ছিল, পরে মামলা করেছে। আরিফকে আমি জিম্মায় নিইনি, তার দাদা সিরাজুল ইসলাম তাকে ছেড়ে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,
“এ ধরনের ঘটনা আমরা আগেও স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করেছি।”
তবে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
পুলিশের বক্তব্য
পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা নিশ্চিত করেছেন,
“বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে তদন্ত চলছে।”
সামাজিক সচেতনতা ও আইনের শাসন
এ ধরনের ঘটনা সমাজে নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ ও সামাজিক সচেতনতা জরুরি।
কী করা উচিত?
-
ধর্ষণের মতো অপরাধে স্থানীয় আপোষ-মীমাংসা নয়, আইনের আশ্রয় নিন।
-
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষায় পরিবার ও সমাজকে সচেতন হতে হবে।
-
এমন ঘটনায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (১৬১২৩ নম্বরে যোগাযোগ) বা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ সাহায্য নিন।
শেষ কথা
এই মর্মান্তিক ঘটনায় ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সমাজের দায়িত্ব। আশা করা যায়, দোষীদের দ্রুত শাস্তি হবে এবং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: রাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ: তদন্ত চলছে
#নারীসুরক্ষা #ধর্ষণবিরোধীআন্দোলন #ন্যায়বিচারচাই