বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছেন পুলিশ কনস্টেবল থেকে বিতর্কিত ধনকুবের হয়ে ওঠা জেএম খালেক। এক সময় দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই ব্যক্তি অল্প সময়ের মধ্যেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, তার সম্পদের উৎসের পেছনে রয়েছে নিয়োগ বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক প্রভাব।
শৈশব থেকে শুরু
পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার শাখারীকাঠি গ্রামের এক প্রান্তিক পরিবারের সন্তান ছিলেন জেএম খালেক। জীবনের শুরুর দিকে লেখাপড়ার খরচ চালাতে তাকে পুকুর-খাল থেকে শাপলা তুলতে হতো। অনেক কষ্টে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে তিনি ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন।
সম্পদের পাহাড় গড়ার পথ
খালেকের ক্যারিয়ার পাল্টে যায় যখন তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলি করা হয়। সেখানে এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার আত্মীয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর থেকে নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের কাছ থেকে ঘুষের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে থাকেন তিনি। মাত্র এক দশকের মধ্যেই তিনি রাজকীয় বাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট এবং বিপুল জমির মালিক বনে যান।
ঢাকায় বসুন্ধরা ও মিরপুরে তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। মঠবাড়িয়া পৌরসভায় কোটি টাকায় গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন ভবন। পাশাপাশি বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় প্লট, জমি এবং অন্যান্য স্থাবর সম্পদ সংগ্রহ করেছেন তিনি।
প্রভাব ও রাজনৈতিক সম্পর্ক
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেএম খালেক দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের অন্যতম অর্থদাতা হিসেবে কাজ করছেন। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বর্তমানে ভারতে আত্মগোপনে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন বলেও জানা যায়।
অবৈধ কার্যকলাপের অভিযোগ
তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচার, ভুয়া সিম ব্যবহার এবং অবৈধ গাড়ি কেনার অভিযোগ। জানা যায়, সংসদ সদস্যদের স্টিকার ব্যবহার করে তিনি দীর্ঘদিন সরকারি প্রভাব খাটিয়ে চলাফেরা করতেন। অভিযানের খবর আগাম পেয়ে তিনি একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডারসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা অভিযোগ করেছেন, খালেকের সীমাহীন দুর্নীতি দ্রুত তদন্ত করা জরুরি। অনেকের মতে, কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছত্রছায়ায় তিনি এতদিন নিরাপদ ছিলেন। তবে এখন তাকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি উঠেছে।
উপসংহার
জেএম খালেকের জীবনকাহিনী কেবল একজন ব্যক্তির উত্থানের গল্প নয়, বরং দুর্নীতি ও প্রভাবের মাধ্যমে কীভাবে একটি প্রান্তিক পরিবার থেকে আসা কেউ অল্প সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে সম্পদশালী হয়ে ওঠে তার একটি উদাহরণ। সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ ধরনের ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মাউশি চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা: নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ