বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে শোকজ নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে। দলের দপ্তর থেকে সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
শোকজ নোটিশ ও সময় বাড়ানোর পটভূমি
সম্প্রতি জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার কারণে বিএনপি ফজলুর রহমানকে শোকজ নোটিশ প্রদান করে। রোববার বিকেলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তিনি দলের কাছে সাত দিনের অতিরিক্ত সময় প্রার্থনা করেন। দল তার আবেদন আংশিক মঞ্জুর করে আরও এক দিন সময় দেয়, অর্থাৎ রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী, মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে জবাব জমা দিতে হবে।
প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ
এদিকে ফজলুর রহমান দাবি করেছেন, দেশ-বিদেশ থেকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র’ তাকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
“আমার সেগুনবাগিচার ভাড়া বাসার সামনে কয়েকজন অবস্থান নিয়েছে। তারা আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমি মনে করছি, আমার জীবন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
তার ভাষ্য অনুযায়ী, স্থানীয় ও বিদেশি কিছু ইউটিউবার এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি তাকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার বিরুদ্ধে সহিংস উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ
ফজলুর রহমানের বক্তব্যকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। কিশোরগঞ্জে তার নিজ এলাকায় মানুষ প্রতিবাদ করেছে, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কয়েকজন তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। এছাড়া সোমবার তার বাসার সামনেও বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেয়।
তিনি বলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ-৪ এর মানুষ আমার এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় আছে। সংবিধান অনুযায়ী দেশে আমার বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। আমাকে কেন হত্যার হুমকি দেওয়া হবে?”
দলের ভূমিকা ও তার প্রতিক্রিয়া
দল তাকে শোকজ নোটিশ দিলেও ফজলুর রহমান মনে করেন, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তার ভাষায়,
“একজন কর্মীর বক্তব্য যদি দল মনে করে বিতর্কিত, তাহলে শোকজ করতেই পারে। আমাকেও করেছে।”
তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন কেন তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন,
“আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হোক, সমালোচনা করা হোক— সেটা মেনে নেব। কিন্তু আমার বাসার সামনে গিয়ে মব তৈরি করে হত্যার হুমকি দেওয়া অন্যায়।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা
ফজলুর রহমান জানান, তার বাসার সামনে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম রেখা এবং আইনজীবী অভিক রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
উপসংহার
বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত ও ফজলুর রহমানকে ঘিরে চলমান বিতর্ক এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দলীয় শোকজ নোটিশের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রাণনাশের হুমকি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলছে। আগামীকাল তিনি কীভাবে শোকজের জবাব দেন, সেটিই এখন সবার নজরে।