রাজধানীতে একটি আলোচনাসভাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণ থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ মোট ১১ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে তাদের শাহবাগ থানার মাধ্যমে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার পটভূমি
ডিআরইউর শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত হয়েছিল ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। মঞ্চ ৭১ নামের সংগঠনটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও বিকৃতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে এই কর্মসূচির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সাবেক সভাপতি ড. কামাল হোসেনের, তবে তিনি শেষ পর্যন্ত আসেননি।
আলোচনার মাঝেই বিশৃঙ্খলা
প্রথম বক্তা হিসেবে অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিযোগ করেন যে দেশের সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে এবং এর পেছনে কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের ভূমিকা রয়েছে। তার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই ‘জুলাই যোদ্ধা’ ব্যানারধারী একদল যুবক মিলনায়তনে প্রবেশ করে স্লোগান দিতে থাকে।
তারা স্লোগান দেয়:
“লীগ ধর, জেলে ভর”
“জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”
“জুলাইয়ের যোদ্ধারা এক হও, লড়াই করো”
পরবর্তীতে তারা আলোচনা সভার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং উপস্থিত অতিথিদের অবরুদ্ধ করে রাখে।
পুলিশের হস্তক্ষেপ
অচিরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রমনা বিভাগের এডিসি আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক কার্জনসহ মোট ১১ জনকে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে তাদের শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়, পরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমরা অনুষ্ঠান শুরু করেছিলাম, লতিফ সিদ্দিকী সাহেব এসেছিলেন, কিন্তু কামাল হোসেন আসেননি। এর কিছুক্ষণ পরেই যুবকরা হৈচৈ শুরু করে আমাদের ঘিরে ফেলে। তবে তারা কারও গায়ে হাত তোলে নাই। পরে পুলিশ এসে সবাইকে নিয়ে যায়।”
ঘটনাস্থলে একটি ভাঙা টেবিল এবং অস্থিরতার চিহ্ন দেখা যায়। তবে শারীরিক সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
উপসংহার
মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে আলোচনা সভায় এই ধরনের ঘটনা নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাবেক মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি থাকার কারণে ঘটনাটি ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে। পুলিশি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হলেও, পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগকে ফেরাতে নতুন নীলনকশা: এস আলমের দিল্লি সফর নিয়ে চাঞ্চল্য