বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক মহাসমাবেশে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবির ভিত্তিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে জানানো হয়, আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৬শে সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমরণ অনশনে যাবেন।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবি
শিক্ষক সমাজের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো—
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের প্রবেশ পদকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা।
দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করা।
চাকরিতে ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দূর করা।
শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী, এ তিনটি বিষয় বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকদের কর্মপরিবেশ ও মর্যাদা উভয়ই উন্নত হবে।
আন্দোলনের পটভূমি
শিক্ষকরা জানান, তাদের এই আন্দোলন হঠাৎ শুরু হয়নি। চলতি বছরের মে মাস থেকে তারা ধাপে ধাপে আন্দোলনে নেমেছেন। প্রথমে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি, পরে তা দুই ঘণ্টা এবং পরে আধাবেলার কর্মবিরতিতে রূপ নেয়। অবশেষে ২৬শে মে থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে আসলেও, বাস্তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এজন্যই পুনরায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
মহাসমাবেশে উপস্থিতি
এই মহাসমাবেশে ছয়টি ভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। শুধু শিক্ষকরা নন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেমন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারাও সেখানে উপস্থিত থেকে শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
ঐক্য পরিষদের ঘোষণা
ঐক্য পরিষদের অন্যতম নেতা এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন—
“প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে যদি ২৫শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেয়া না হয়, তবে ২৬শে সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করা হবে।”
শিক্ষকদের প্রত্যাশা
প্রাথমিক শিক্ষকেরা মনে করেন, তাদের দাবি পূরণ হলে শিক্ষা খাতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। তারা শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক শিক্ষা দিতে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ চান।
উপসংহার
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের এই দাবিগুলো শুধু তাদের আর্থিক ও পেশাগত উন্নতির প্রশ্ন নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক মানোন্নয়নের সঙ্গেও সম্পর্কিত। সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, তবে একদিকে যেমন শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ দূর হবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও একটি স্থিতিশীল পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। এখন সবাই তাকিয়ে আছে ২৫শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত— সরকার কতটা ইতিবাচক সাড়া দেয়, সেটিই নির্ধারণ করবে পরবর্তী আন্দোলনের রূপ।
আরও পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা