চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আবারও শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সংঘর্ষের ঘটনায় আলোচনায় এসেছে। রোববার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট–সংলগ্ন জোবরা এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়, যা দ্রুতই ভয়াবহ রূপ নেয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত
সংঘর্ষের মূল ঘটনা শুরু হয় শনিবার গভীর রাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ভাড়া বাসায় প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। নির্ধারিত সময়ের পর গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছাত্রীটি ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করলে দারোয়ান প্রথমে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং রাতেই উত্তেজনা শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দারোয়ান তাকে মারধর করার পর খবর পেয়ে সহপাঠীরা ঘটনাস্থলে যায়। তারা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাতভর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর রোববার দুপুরে আবারও উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়, যা বড় আকার ধারণ করে।
সংঘর্ষ ও আহতদের অবস্থা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয়রা লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্র এবং ইটপাটকেল নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। পাল্টা শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এতে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ইটের আঘাতে আহত হন। পাশাপাশি প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই সদস্যও এ ঘটনায় আহত হন।
এসময় স্থানীয়দের হামলায় পুলিশের দুটি, নিরাপত্তা বাহিনীর একটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, “আমাদের বাসার গেট সাধারণত রাত ১১টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আমি কিছুটা দেরি করে ফিরলে দারোয়ান গেট খোলেননি। অনেক অনুরোধের পর গেট খুলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন এবং আমাকে ধাক্কা-থাপ্পড় মারেন। এরপর সহপাঠীরা আমাকে সহায়তা করতে এলে ঘটনাটি বড় আকার ধারণ করে।”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয়দের পক্ষ থেকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। তারা টর্চলাইটের আলো ব্যবহার করে আক্রমণ চালায় এবং হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
রাত ৩টার দিকে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “এটি শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিত হামলা। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের পরীক্ষা ছিল। এজন্য রোববারের সকল পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বর্তমান পরিস্থিতি
সংঘর্ষ ও সহিংসতার কারণে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক আরও জটিল আকার ধারণ করছে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ: তিন দাবিতে আল্টিমেটাম