বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা একটি দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা পদ্ধতি। দেশের হাজারো মানুষ এই চিকিৎসার ওপর আস্থা রেখে রোগ নিরাময় করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের বাইরে হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানি চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডা.’ (ডাক্তার) পদবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনার বিরুদ্ধে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হোমিওপ্যাথিক স্বার্থ সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানায়। সংগঠনটির নেতারা বলেন, ১০ আগস্ট জারি করা নির্দেশনা কেবল বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং এটি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা আইন-২০২৩ এর সাথেও সাংঘর্ষিক।
কমিটির আহ্বায়ক ডা. আরিফুর রহমান মোল্লা উল্লেখ করেন, আইনের ধারা ২(১৩)-এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, হোমিও চিকিৎসকের নামের আগে ‘ডা.’ পদবি ব্যবহার করার বৈধ অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া আইনের ৩নং ধারায় উল্লেখ আছে—অন্য কোনো আইনের সাথে বিরোধ হলে হোমিওপ্যাথি আইনকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। ফলে সাম্প্রতিক নির্দেশনাটি আইনের পরিপন্থি।
হাইকোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ
নেতারা আরও বলেন, হাইকোর্টের রায়কে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বিষয়টি এখনও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। তাই রায়ের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের পদবি ব্যবহারে বাধা দেওয়া যৌক্তিক নয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে বহু দেশেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা বৈধভাবে ‘ডা.’ পদবি ব্যবহার করে আসছেন।
সংগঠনের ছয় দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে হোমিওপ্যাথিক স্বার্থ সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করে। দাবিগুলো হলো—
১. ১০ আগস্টের নির্দেশনা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং হোমিও চিকিৎসকদের হয়রানি বন্ধ করা।
২. হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা আইন-২০২৩ দ্রুত বাস্তবায়ন ও শিক্ষা কাউন্সিল গঠন।
৩. বেসরকারি হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী শতভাগ বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা।
৪. বিদেশ থেকে মানসম্মত ওষুধ আমদানিতে জটিলতা দূর করা।
৫. জাতীয় পর্যায়ে গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা ও সরকারি কলেজে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা।
৬. প্রকল্পভুক্ত হোমিও চিকিৎসকদের পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা।
হোমিওপ্যাথির গুরুত্ব
কমিটির সদস্য সচিব ডা. শফিকুল আলম নাদিম বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা দেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা। অথচ বারবার এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান—আইন মেনে হোমিও চিকিৎসকদের যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন শেখ, ডা. বজলুল হাসান, ডা. মাহবুব হাফিজ, ডা. মসিউজ্জামান পাপ্পু, ডা. একেএম জাকির হোসেন, ডা. মজিবুল্যাহ মজিব, ডা. খলিলুর রহমান, ডা. শাহজালাল আহমেদ, ডা. নাইমুল হক, ডা. কাসেমুর রহমান, ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডা. আব্দুল আলীম, ডা. মামুন হাসিব ভূঁইয়া, ফয়সাল মেহবুব মিজুসহ অনেকে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, হোমিও চিকিৎসকরা দেশের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, সম্প্রতি তাদের ওপর আরোপিত পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা চিকিৎসক সমাজে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। তাই অনেকেই মনে করছেন, সরকারের উচিত দ্রুত আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ বিতর্কের অবসান ঘটানো।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ভারতের অ্যাপোলো ক্লিনিকের যাত্রা: স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত