ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষের পথে। তবে এ বছর কলেজগুলোতে আশানুরূপ শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জেলার মোট ৭৮টি কলেজের মধ্যে সাতটি কলেজ একেবারেই শিক্ষার্থী পায়নি। আবার বেশিরভাগ কলেজেই ভর্তি সংখ্যা নগণ্য, যা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে চিত্র ভিন্ন
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজকে ধরা হয়। এখানে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা মিলিয়ে মোট ১২০০ শিক্ষার্থীর আসন রয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়ার তিন ধাপ শেষ হওয়ার পরও মাত্র কয়েকটি আসন খালি আছে— ব্যবসায় শিক্ষায় ৫০, মানবিকে ছয় এবং বিজ্ঞানে একটি। অর্থাৎ এই কলেজে ভর্তি সংকট নেই বললেই চলে।
কিন্তু জেলার অন্য কলেজগুলোর অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। অনলাইন ভর্তি ব্যবস্থায় প্রতিটি কলেজের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, সাতটি কলেজ কোনো শিক্ষার্থীই পায়নি। আবার অনেক কলেজে ভর্তি আবেদনকারীর সংখ্যা এক বা দুই জন মাত্র।
কোন কোন কলেজে শিক্ষার্থী নেই
তথ্য অনুসারে, শিক্ষার্থী না পাওয়া সাতটি কলেজ হলো—
নবীনগর উপজেলার সাতগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ
কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজ
জিনোদপুর ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
রাবেয়া মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেন্ট্রাল কলেজ (জেলা সদর)
সাদেকপুর ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (জেলা সদর)
উলুকান্দি কলেজ (বাঞ্ছারামপুর)
এ ছাড়া আরও অনেক কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কম। যেমন— সরাইল উপজেলার তিতাস মডেল কলেজ ৪৫০ আসনের বিপরীতে মাত্র একজন শিক্ষার্থী পেয়েছে। বাঞ্ছারামপুরের ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হয়েছে মাত্র ১৩ জন। আশুগঞ্জের বগৈর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, কিন্তু বিজ্ঞানে কেউ নেই। বিজয়নগরের কবি সানাউল হক কলেজে ৩০ জন, কসবায় সিরাজুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২৬ জন, আখাউড়ার ছতুরা চান্দপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০ জন এবং জাহানার হক কলেজে মাত্র ৪১ জন ভর্তি আবেদন করেছে।
সংকটের কারণ
শিক্ষার্থী সংকটের প্রধান কারণ হলো এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আসনের তুলনায় অনেক কম। জেলায় কলেজগুলোতে মোট আসন রয়েছে ৪১ হাজার ৮৪০, অথচ এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল মিলিয়ে পাস করেছে মাত্র ২০ হাজার ২২২ জন। পাসের হর দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। গত বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী জেলার বাইরে ভালো কলেজে ভর্তি হয়েছে। ফলে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলোতে ভর্তির সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
এমপিওভুক্ত কলেজগুলোর শঙ্কা
শিক্ষার্থী না থাকায় সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কারণ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে গেলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এর ফলে শিক্ষকদের চাকরি এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিও ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নবীনগরের কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনির হোসেন বলেন,
“শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। সবকিছু এখন অনলাইনে হয়, তাই শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো কলেজ বেছে নিচ্ছে। যদি আবার নতুন করে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়, তবে কিছু শিক্ষার্থী পাওয়া যেতে পারে।”
ভর্তি প্রক্রিয়ার ধাপ
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তির প্রথম ধাপের ফল ২০ আগস্ট প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শেষ হয়েছে ২৫ আগস্ট এবং ফল প্রকাশ করা হয় ২৮ আগস্ট। এরপর ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ধাপে আবেদন নেওয়া হয়। চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়া ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। আর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে।
পরিসংখ্যান এক নজরে
মোট পরীক্ষার্থী (এসএসসি, দাখিল, ভোকেশনাল): ২৯,১২২
মোট পাস: ২০,২২২
অকৃতকার্য: ৮,৯০০
জিপিএ-৫ প্রাপ্ত: ১,৬১১
পাসের হার: ৬৯.৪৪%
দাখিলে পাসের হার ছিল ৭০.৩৭ শতাংশ (জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮ জন) এবং ভোকেশনালে পাসের হার ছিল ৭০.৪৪ শতাংশ (জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০ জন)। সবমিলিয়ে, গত বছরের তুলনায় এবারের ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয়ই কমেছে।
উপসংহার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী সংকট যে কতটা গুরুতর আকার ধারণ করেছে, তা এ বছরের ভর্তি পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিয়েছে। জেলার শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও কলেজগুলোর টিকে থাকার জন্য এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। না হলে অনেক কলেজ কার্যত টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: প্রবেশপত্র ডাউনলোড শুরু