রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। গভীর রাতে হঠাৎ করে একটি বাসার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন সদস্য গুরুতর দগ্ধ হন। এ দুর্ঘটনায় স্বামী, স্ত্রী ও তাদের দুই শিশু সন্তান অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল?
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ধলপুর বউবাজার লিচুবাগান এলাকার একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, পরিবারের সদস্যরা তখন ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ এসি বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ শোনা যায় এবং মুহূর্তেই ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে চারজনই দগ্ধ হন।
আহতদের পরিচয়
দগ্ধ চারজন হলেন—
মো. তুহিন হোসেন (৩৮) – তিনি মোতালেব প্লাজার একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করেন।
ইবা আক্তার (৩০) – তুহিনের স্ত্রী।
তানভীর (৯) – তাদের বড় ছেলে।
তাওহীদ (৭) – ছোট ছেলে।
তুহিনের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ভাড়া থাকছিলেন।
কীভাবে উদ্ধার করা হলো?
দগ্ধ ইবার বোন ফারজানা আক্তার জানান, তারা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে ঘর কেঁপে ওঠে এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আশপাশের ভাড়াটিয়ারা দ্রুত এগিয়ে এসে আগুন নেভান এবং আহতদের রাতেই রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান।
চিকিৎসকদের বক্তব্য
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান গণমাধ্যমকে জানান—
মো. তুহিন হোসেনের শরীরের ৪৭ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
তার স্ত্রী ইবার শরীরের ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
ছেলে তানভীরের শরীরে ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
ছোট ছেলে তাওহীদের শরীরের ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
চিকিৎসক আরও জানান, চারজনকেই হাসপাতালের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনার কারণ
যদিও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এসির বিদ্যুতিক গোলযোগ থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে, তবে বিস্তারিত তদন্ত ছাড়া সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়। ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি—
নিয়মিত এসির সার্ভিস ও মেরামত করা।
নিম্নমানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার না করা।
ঘুমানোর আগে এসি ও অন্যান্য ইলেকট্রিক যন্ত্র বন্ধ আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া।
বাড়িতে সর্বদা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখা।
সমাপ্তি
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল—গৃহস্থালির বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অবহেলা ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। আমরা সবাই যদি একটু সচেতন হই এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করি, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ