বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন বিএনপির সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
অভিযোগের পটভূমি
আতাউল্লাহর লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হলে স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। স্থানীয়দের পক্ষে আপত্তি জানাতে আতাউল্লাহ নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন।
কিন্তু তার দাবি অনুযায়ী, এই আপত্তি জানানোর পর থেকেই তিনি বিএনপি নেতা রুমিন ফারহানার সমর্থকদের হুমকি-ধমকির মুখে পড়েন। এমনকি নির্ধারিত শুনানির দিন ইসি ভবনে প্রবেশেও তাকে বাধা দেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনে হামলার অভিযোগ
অভিযোগে বলা হয়, ২৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে নির্বাচন কমিশনে শুনানি চলাকালে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আতাউল্লাহর দাবি, এই হামলায় রুমিন ফারহানার অনুসারীরা জড়িত ছিলেন এবং ঘটনার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি।
তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরে এ ধরনের হামলার নজির নেই। তার মতে, এই ঘটনা কেবল কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে না, বরং ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাবও ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নির্বাচন কমিশন সবসময় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। এবার সেই বিতর্কে সরাসরি জড়ালেন রুমিন ফারহানা। এনসিপি নেতার অভিযোগ অনুসারে, এ ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য একটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে যে গণতন্ত্র অর্জিত হয়েছে, সেটি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তার ভাষায়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অবস্থান এমনকি অতীতের স্বৈরশাসনের সময়কেও হার মানিয়েছে।
দাবি ও আহ্বান
আতাউল্লাহ নির্বাচন কমিশনের প্রতি তিনটি মূল দাবি উত্থাপন করেছেন—
রুমিন ফারহানা এবং তার কথিত সমর্থকদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
নির্বাচন কমিশনকে একটি নিরপেক্ষ ও জনগণের আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠন করা।
কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে ব্যর্থ হলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পদত্যাগ করে যোগ্য নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি করা।
উপসংহার
এই অভিযোগের সত্যতা নির্বাচন কমিশন তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, এ ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে এবং গণতন্ত্রের স্বচ্ছ চর্চা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপি নেতা রুমিন ফারহানা এবার যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন, তা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।