ঢাকার সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনেই ঘটে এক আলোচিত ঘটনা। নির্ধারিত সময়ের পর কেন্দ্রে পৌঁছানোয় পরীক্ষায় বসতে না পেরে কেন্দ্রের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরীক্ষার্থী আনিসা আহমেদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তার কান্নার ছবি ও ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়, যা নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
আনিসার দাবি ছিল—সেদিন সকালে অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল, এজন্য পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হয়। এই মানবিক কারণ তুলে ধরে অনেকেই তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড প্রাথমিকভাবে তাকে পরীক্ষায় বসার অনুমতির কথা জানায় এবং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্তে নতুন তথ্য
তদন্ত শেষে জানা যায়, আনিসার দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কর্মকর্তাদের মতে, তার মায়ের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার দাবির কোনো প্রমাণ মেলেনি। এমনকি যে ভর্তির কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান জানান, কমিটির অনুরোধে আনিসার কাছ থেকে কিছু নথি সংগ্রহ করে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে—দেওয়া নথির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। এজন্য বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলা প্রথমপত্রে তার জন্য পুনরায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে না।
পাসের সম্ভাবনা এখনো আছে
তবে আনিসার জন্য একমাত্র সুযোগ রয়ে গেছে—বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ৬৬ নম্বর পেলে দুই পত্রের গড় নম্বর অনুযায়ী তাকে পাস ধরা হবে। শর্ত হলো, অন্য সব বিষয়ে তাকে পাস করতে হবে।
সরাসরি যোগাযোগ ব্যর্থ
আনিসা বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের দেওয়া দুটি ফোন নম্বরের মধ্যে একটি বন্ধ পাওয়া গেছে, আরেকটিতে কল করলেও সাড়া মেলেনি।
ঘটনার পটভূমি
গত ২৬ জুন এবারের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় বাংলা প্রথমপত্রের মাধ্যমে। সেদিন সকালেই আনিসার কেন্দ্রের বাইরে কান্নার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তার খালা পরিচয় দেওয়া এক নারী তখন দাবি করেন, পরীক্ষার দিন সকালে আনিসার মা স্ট্রোক করেন এবং বাবা আগেই মারা গেছেন, ফলে মাকে হাসপাতালে নেওয়ার দায়িত্ব আনিসার ওপর পড়ে। এই আবেগঘন বর্ণনায় অনেকেই সহানুভূতি দেখিয়ে পরীক্ষার নিয়ম পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
তবে তদন্তে প্রমাণ মেলায়নি এই গল্পের বেশ কিছু অংশ। এতে প্রশ্ন উঠেছে—মানবিকতার নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে অনিয়ম: ১০০ এজেন্সির বিরুদ্ধে সিআইডির তদন্ত