1. হিজামা কি?
এককথায় , হিজামা হলো রাসুল সাঃ এর বর্ণিত এমন একটা চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে শরীরের সিলেক্টেড কিছু পয়েন্ট/এলাকা থেকে কিছু ম্যাকানিক্যাল ডিভাইসের মাধ্যমে সামান্য কিছু টক্সিন যুক্ত রক্ত / রক্ত রস/সিরাম বের করে নিয়ে রোগ মুক্তির চেষ্টা করা হয় ।
2. হিজামা করলে কি ব্যথা লাগে?
না, সামান্য আঁচড় বা হালকা সুড়সুড়ির মত মনে হয়
3. হিজামা করলে কি শরীর দুর্বল লাগে ?
না, হিজামার পরে শরীর ফ্রেস মনে হয় , ভালো ঘুম হয় , শরীরে একটা প্রশান্তি অনুভূত হয়।
4. সুস্থ্য মানুষ কি হিজামা চিকিৎসা নিতে পারে?
অসুস্থ্য মানুষের সাথে সাথে সুস্থ্য মানুষ ও তার শরীর ঠিক রাখার জন্য এবং একটা সুন্নাহ পালনের জন্য হিজামা গ্রহন করতে পারেন ।
5. সুস্থ্য মানুষ কতদিন পর পর হিজামা গ্রহন করতে পারেন?
প্রতি ৩ বা ৪ মাস পর পর শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য হিজামা গ্রহন করতে পারেন
6. অসুস্থ্য মানুষকে কতদিন পর পর হিজামা নিতে হবে ।
এই সময়টা নির্ধারন করবে ডাক্তার , রোগের ও রোগীর অবস্থা অনুসারে এটা নির্ধারণ করা হয়।
7. শুনেছি , একবার হিজামা করলে নাকি বার বার হিজামা করতে হয় ?
না , এটা ভুল কথা ।
8. বাংলাদেশে কি হিজামা বৈধ চিকিৎসা ? এর জন্য কি আলাদা নীতিমালা প্রয়োজন আছে ?
অবশ্যই বাংলাদেশে হিজামা বৈধ চিকিৎসা , এর জন্য আলাদা নীতিমালা প্রয়োজন নেই । কারন , বাংলাদেশে আয়ুর্বেদ ও ইউনানী সিলেবাসে সরকারী ভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিলেবাস প্রনয়ন কমিটি সিলেবাসে হিজামা অন্তভুক্ত করে দিয়েছেন । তাই যারা চিকিৎসা করার রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসক , তারা সবাই হিজামা করার জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত এবং তারাই হিজামা করার জন্য সরকারী লাইসেন্স / রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হিজামা চিকিৎসক । তবে ব্যচেলর ফিজিওথেরাপিস্ট গন চায়নিজ ট্রেডিশনাল মেডিসিন হিসেবে কাপিং থেরাপি পড়ে থাকেন আর হিজামা কাপিং থেরাপির একটা পার্ট ।
9. তাহলে আয়ুর্বেদিক বা ইউনানি চিকিৎসক ছাড়া কি অন্য কেউ হিজামা করাতে পারবে না ?
অবশ্যই , হিজামা করাতে পারবে , তবে তার দুইটা জিনিশ থাকতে হবে
ক) অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ডাক্তারি করার প্রাক্টিস রেজিট্রেশন
খ) ইউনানি বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক না হলে , হিজামার উপরে প্রাক্টিক্যাল কিছু প্রশিক্ষণ
10. তাহলে আমরা যদি হিজামা নিতে চাই তাহলে কার কাছ থেকে নেবো ?
একজন ইউনানি বা আয়ুর্বেদিক বা অন্য প্যাথির ডাক্তারের কাছ থেকে যার বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ডাক্তারি করার প্রাক্টিস রেজিট্রেশন আছে ।
11. হিজামা করার জন্য ডাক্তার কেনো হতে হবে এবং কেনো বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ডাক্তারি করার প্রাক্টিস রেজিট্রেশন থাকতে হবে ?
কারন হিজামা একটা চিকিৎসা বিদ্যা , যেখানে রোগ সঠিকভাবে ডায়গোনোসিস করতে হয় , সঠিকভাবে এনাটমি ও ফিজিওলোজি জানতে হয় , প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হয় , কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ প্রেক্রাইব করতে হয় । এগুলো একজন চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের দ্বারা সম্ভব না । আর দেশের আইন অনুসারে কারো কোনো চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ডাক্তারি করার প্রাক্টিস রেজিট্রেশন থাকতে হবে ।
12. যারা ১ দিন , ৫ দিন আবা এমন ছোটো ছোটো ট্রেনিং কোর্স করায় এবং এই ট্রেনিং যারা করেন তারা কি হিজামা করাতে পারবেন না ? আপনিও তো ১ দিনের কোর্স করান ।
হিজামা করাতে পারবেন , তবে প্রফেশনাল ভাবে বা চেম্বার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করাতে পারবেন না । তারা তাদের আপনজনদের হিজামা করাতে পারবেন ।
যেমন , আমরা জানি যে জ্বর হলে নাপা ট্যাবলেট খেতে হবে ।আমাশয় হলে মেট্রোনিডাজল খেতে হবে , পাতলা পায়খানা হলে ORS / খাবার স্যালাইন খেতে হবে । এগুলো আমকরা জানি এবং আমরা এভাবে নিজেদের রোগে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকি , তবে এর মানে এই না যে আমরা একটা চেম্বার নিয়ে রোগী দেখা শুরু করে দেই ।
ঠিক , তেমনি যারা হিজামা জানেন , শর্ট কোর্স করেছেন তারাও তাদের আপন জনদের জন্য হিজামা করাতে পারবেন প্রাথমিক বা প্রাইমারি চিকিৎসা হিসেবে ।
হ্যা , আমিও হিজামা কোর্স করাই , যেনো নিজের আপনজনদেরকে হিজামা করাতে পারেন । প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ।
13. হিজামা কি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত?
আগে ধারনা করা হতো যে এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই , কিন্তু এখন বেশ কিছু বিজ্ঞানি গবেষনা করে এই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রমান করেছেন । আমার সামনে যে নতুন কম্পিলিট হিজামা ও কাপিং থেরাপির উপরে যে বই বের হবে সেখানে বিস্তারিত দেওয়া আছে । এখন চাইলে গুগোলে সার্চ দিয়ে আপনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন ।
14. হিজামার পয়েন্ট সহ রোগের কারন লক্ষন সহ সব দেওয়া আছে এমন একটা বইয়ের নাম বলুন।
বাজারে – আমার লেখা “ হিজামা “ নামের একটা বই আছে , যেখানে রোগের কারন লক্ষন সহ কোন রোগের কোন পয়েন্ট এমনি তিনটি মেথড আছে । সামনে এমন এরো একটা বড় বই বের হচ্ছে এছাড়াও বাজারে আরো কিছু বই আছে যা আপনি সংরহ করে পড়তে পারেন ।
15. হিজামা করলে কেমন কেমন খরচ হয় ?
একেকজন ডাক্তার ভাই একেক রকম টাকা নেন । এটা নির্ভর করে ডাক্তারের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপরে । তবে আমি সাধারনত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ভিজিট নেই ৫০০ টাকা । আর হিজামা করার জন্য প্রতি পয়েন্ট ১০০ টাকা করে (ভ্যাকুয়াম মেসিন ব্যবহার করলে ২০০ টাকা , এটা সাধারনত মাথায় চুল থাকা অবস্থায় হিজামা করলে ) ।
হিজামা যারা করতে আসেন তাদের থেকে ৫০০ টাকা ভিজিট নেইনা , সুন্নাহ ভিত্তিক চিকিৎসার প্রসারের জন্য । শুধু প্রতি পয়েন্ট ১০০ টাকা করে এবং বিনা ভিজিটে প্রেসক্রিপশন দেই ( যদি ওষুধ লাগে তাহলে ) । আর আমি নিজের হাতেই হিজামা করাই ।
16. হিজামার ক্ষেত্রে অনেকে পেন ব্যবহার করে অনেকে আবার ব্লেড ব্যবহার করেন কোনটা ভালো?
অবশ্যই ব্লেড ভালো , তবে নতুন হিজামা থেরাপিস্টরা পেন ব্যবহার করে নিরাপত্তার জন্য ।
17. আপনি কি ব্লেড নাকি পেন ব্যবহার করেন?
আমি ১১ নাম্বার সার্জিক্যাল ব্লেড ব্যবহার করি ।
18. হিজামা করার পর দাগ কতদিন থাকে ? কাটা দাগ থাকে কিনা ?
হিজামা করার পর ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দাগ চলে যায় । আর দক্ষদের দ্বারা হিজামা করালে কাটার কোনো দাগ খুজে পাবেন না । আমার দ্বারা যারা হিজামা করায় তারা হিজামা করার পরে কাটা দাগ খুজে পায় না । কোথায় থেকে রক্ত বের হলো এই দাগ খুজে পায় না ।
19. হিজামায় নাকি বেশি রক্ত বের হওয়া ভালো ?
না , কথাটা ঠিক না। কারো রক্ত বেশি বের হয় , কারো খুব অল্প বের হয় , রক্ত বেশি বা কম বের হওয়ার সাথে ভালো মন্দের সম্পর্ক নাই ।
20. আপনার কাছে ১ দিনের হিজামা কোর্স করার জন্য কত টাকা খরচ হবে?
সামনে একটা ব্যাচ আছে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ , এই কোর্সের জন্য ১০০০ টাকা করে কোর্স ফি । এর পরের কোর্সগুলোতে আমরা ২০০০ টাকা করে কোর্স ফি নেবো । এই কোর্সে থাকার জন্য
01712 859950 অথবা 01972 859950 নাম্বারে ফোন দিয়ে আমার সহকারীর সাথে কথা বললেই হবে ।
লেকচার শিট এবং কোর্স শেষে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে ( কোর্সে উপস্থিত থাকার একটা সার্টিফিকেট , এটা কোনো একাডেমিক সার্টিকেট না )
21. শুনেছি হাদিসে হিজামার কথা বলা আছে , এমন কয়েকটি হাদিস দিলে উপকার হয়
নিম্নে এমন কিছু হাদিস দিয়েছিঃ
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেউ হিজামা করতে চাইলে সে যেন আরবী মাসের ১৭, ১৯ কিংবা ২১ তম দিনকে নির্বাচিত করে। রক্তচাপের কারণে যেন তোমাদের কারো মৃত্যু না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে (হিজামা)।” সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর : ৩৪৮৬
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে গিয়েছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন।” সুনানে তিরমিযী হাদীছ নম্বর : ২০৫৩
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারণ, কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৮২
হযরত জাবির রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় হিজামায় শেফা রয়েছে।” ছহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর : ২২০৫
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “খালি পেটে হিজামাই সর্বোত্তম। এতে শেফা ও বরকত রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বোধ ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।” সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর : ৩৪৮৭
হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হিজামাকারী কতই উত্তম লোক। সে দুষিত ( টক্সিন যুক্ত ) রক্ত বের করে মেরুদন্ড শক্ত করে ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।” সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নম্বর : ২০৫৩
22. হিজামা কি কি রোগের জন্য উপকার করে?
মাইগ্রেন জনিত দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা, উচ্চরক্তচাপ ঘুমের ব্যাঘাত (insomnia) ,স্মৃতিভ্রষ্টতা (perkinson’s disease) , অস্থি সন্ধির ব্যাথা/ গেটে বাত ,ব্যাক পেইন , হাঁটু ব্যাথা ,দীর্ঘমেয়াদী সাধারন মাথা ব্যাথা ,ঘাড়ে ব্যাথা্, কোমর ব্যাথা , পায়ে ব্যাথা ্মাংসপেশীর ব্যাথা (muscle strain) , হাড়ের স্থানচ্যুতি জনিত ব্যাথ , রক্তসংবহন তন্ত্রের সংক্রমন , মুটিয়ে যাওয়া (obesity) , দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ (Chronic Skin Diseses) , চুলের পুষ্টির অভাবজনিত কারনে চুল পড়া (Hair fall) ,মানসিক সমস্যা সহ আরো অনেক সমস্যার জন্য হিজামা করা হয় ।
23. শুধুমাত্র হিজামা দ্বারাই কি রোগ ভালো হবে নাকি ওষুধও খেতে হবে ?
কিছু ক্ষেত্রে হিজামার সাথে ওষুধের প্রয়োজন হয় , আর কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হিজামা দ্বারাই খুব ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায় । কখন হিজামার সাথে ওষুধ প্রয়োজন হবে তা ডাক্তার রোগ নির্নয়ের সময় রোগীকে বলে দিবে ।
24. কোন দিন ও কত তারিখ হিজামা করা উত্তম , রেফারেন্স সহ বলুন।
হিজামার উত্তম তারিখঃ
সাধারণত হিজামার জন্য উত্তম তারিখ হচ্ছে চান্দ্র মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখ।
আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘাড়ের দুই পাশের শিরায় এবং ঘাড়ের কাছাকাছি পিঠের ফুলা অংশে হিজামা করাতেন। তিনি মাসের সতের, ঊনিশ ও একুশ তারিখে হিজামা করাতেন।[ তিরমিযী হা/২০৫১, ২০৫৩; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৩; আবুদাঊদ হা/৩৮৬১, সনদ ছহীহ।]
যদি অসুস্থতা বা ব্যথা অনুভূত হয় তবে উক্ত তারিখের অপেক্ষা না করে যে কোনো সময় হিজামা করানো যাবে।
হিজামার উত্তম দিনঃ
ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর বরকত লাভের আশায় তোমরা বৃহস্পতিবার হিজামা করাও এবং বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবার বেছে নেওয়া থেকে বিরত থাক। আর সোম ও মঙ্গলবারে হিজামা করাও’।[ইবনে মাজাহ হা/৩৪৮৭-৩৪৮৮, সনদ হাসান।]
সুত্রঃ সম্মানিত ডাঃ ফাইজুল হক এর ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেয়া
Leave a Reply