আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো। আর আমিও ভালো আছি। আজ সানরাইজ৭১ এ এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি আমার জীবনের একটি ঘটনা শেয়ার করতে এলাম। আসলে, এটি একটি রোগ যেটাকে আমি ঘটনা বলে প্রচার করলাম। পুরো পোষ্ট যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে অনেক অজানা তথ্য হয়তো জানতে পারবেন।
সময়টা ছিল ২০১৬ইং। বাড়ি থেকে কাছেই একটি বাজারে আমার একটি কম্পিউটারের দোকান ছিল। সেখানে আমি সকাল ১০ টায় যেতাম এবং রাত ১০ টায় ফিরতাম। তবে, দুপুরে আরও একবার বাড়িতে আসতাম। আমি তখন বিয়ে করেছি অর্থাৎ ২০১৪ইং এর নভেম্বরেই আমি বিয়ে করি। তখন শারিরীকভাবে আমি একদম সুস্থ্য ছিলাম। ২০১৬ ইং সালের শেষের দিকে। আমার মাথায় যথেষ্ট ঘন চুল ছিল। এই লিংকে ক্লিক করলে আমার ২০১৬ ইং সালের ছবি দেখতে পারবেন। ছবিটি কেন শেয়ার করেছি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। অর্থাৎ আমি যে সুস্থ্য ছিলাম তারই প্রমাণ এটা।
তো, এই ২০১৬ ইং সালের শেষের দিকে আমার মাথা থেকে আঠালো জাতীয় কি একটা (চামড়া) উঠা শুরু করে। আমি তখন সোরিয়াসিস রোগ এর নামও জানতাম না। চর্মরোগ সম্বন্ধে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। প্রথমে মাথার খুলি’র আশপাশের জায়গা থেকে চামড়াগুলো উঠা শুরু করে। আমি তেমন কিছু মনে করতাম না। ভাবতাম, খুশকি মনে হয়। হাতের নখ দিয়ে তুলতাম। এভাবে প্রায় দু’তিন মাস চলে যায়। এই আঠালো চামড়া উঠার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।
একসময় আমি বুঝতে পারি যে, আমার নিশ্চয়ই কোনো রোগ হয়েছে এবং এটা অবশ্যই চর্ম রোগ। কিন্তু জানি না, কি রোগ। এর মধ্যে কোনো ওষুধ আমি খাইনি। কেউ জানতোও না যে, আমার মাথায় এরকম সমস্যা হয়েছে। আমার পরিবারের কেউ না এমনকি আমার স্ত্রীও না। যেদিন ২০১৭ ইং সাল পড়বে অর্থাৎ বছরের প্রথম দিন – সেদিন আমার এক ভাইস্তা’র (মোঃ হামিদুর রহমান) সহযোগিতায় আমি আমার মাথার চুলগুলো ফেলে দেই অর্থাৎ ন্যাড়া করে ফেলি। যখন ন্যাড়া করা শেষ হয় তখন আমার মাথার অবস্থা দেখে আমি নিজেই হতবাক।
আমার পরিবারের মানুষজন দেখে তো পুরোটাই হতবাক। কারণ, এটা স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। বিভৎস চেহারা ধারণ করেছিল। আমি খুব ভয়ও পেয়েছিলাম। তখনও জানতাম না, এটা কি রোগ। তো, অনেকেই অনেক রকম পরামর্শ দিলো। কেউ বলল, ঢাকা যেতে – কেউ রংপুর ইত্যাদি। আমি মাথায় একটি টুপি পড়ে (ক্যাপ ছিলনা) আমার কাছের ছো্ট্ট শহর দেবীগঞ্জে যাই। সেখানে জেনারেল প্রাকটিশনার ডাক্তারগণ বসেন। হোমিওপ্যাথিরও বেশ কয়েকজন ডাক্তার বসেন।
আমি যাই অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারের কাছে। কারণ, হোমিওপ্যাথি সম্বন্ধে আমার তখন তেমন কোনো ধারণা ছিল না। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তারও কিছুটা হতবাক হয়েছিল আমার মাথার অবস্থা দেখে। তিনি আমাকে ওষুধ দিলেন। ফ্লুগাল ট্যাবলেট দিয়েছিলেন আর ট্রিমকর্ট ইনজেকশন দিয়েছিলেন। ইনজেকশন দিতে বলেছেন ৭টি। আমি ওষুধগুলো সেখান থেকেই কিনে নেই এবং খাওয়া শুরু করি। অবশ্য ১০ দিনের মাথায় আমি মোটামুটি আরাম পাই। এর মধ্যে কম্পিউটারে আমি ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে গুগলে সার্চ করি চর্মরোগ লিখে। হঠাৎ আমার চোখে পড়ে আমার রোগের মতোই রোগের ছবি। আমি অনেক গুলো ছবির সাথে আমার মাথার উঠানো ছবির সাথে মিল করি। দেখতে পাই, আমার যে রোগ হয়েছে এই রোগের নাম সোরিয়াসিস।
মনটা খুব খারাপ হয়েছিল সেদিন। কারণ, এটা কোনো সাধারন রোগ নয়। এত সহজে নিয়ন্ত্রণেও আসে না। এর তেমন কোনো চিকিৎসা’ও নেই। সবমিলে আমি একটা হযবরল মানসিক অবস্থার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাল ছেড়ে দেইনি। নিজের মনকে নিজেই বুঝিয়েছি। বাড়ির কারও সাথে বিষয়টি খুব জোরালোভাবে শেয়ার করিনি। কারণ, তারা তো আর বললেও বুঝবেনা । তারা জানে, অসুখ হয়েছে সুতরাং ওষুধ খেলেই সেরে যাবে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু রোগ আছে যা কোনদিনও শরীর ছেড়ে চলে যায় না। শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণে থাকে। অবশ্য নিয়ন্ত্রণে থাকা আর পরিপূর্ণ সুস্থ্য থাকার মাঝে তেমন কোনো তফাৎ কিন্তু নেই।
এভাবে ঐ অ্যালোপ্যাথি ট্যাবলেটগুলো খাই আর ইনজেকশনগুলো ৭ দিন বা ৫ দিন পরপর দিতে থাকি। প্রায় ২৫-৩০ দিন পরে আমি মোটামুটি সুস্থ্য হয়ে যাই। ভাবলাম, যাইহোক বাঁচা গেল। কিন্তু খুব বেশি দিন সুস্থ্য থাকতে পারিনি। সুস্থ্য হওয়ার ১ মাস পরেই আবার আমি অসুস্থ্য হয়ে যাই। এবার শরীরের পুরো জায়গায় রোগটা দেখা দেয়। আর প্রথম অবস্থায় শুধুমাত্র মাথায় ছিল। শরীরের কোথাও ছিল না মানে একটুও ছিল না।
আবার আমি ঐ ডাক্তারের কাছে ফিরে যাই। কিন্তু তিনি আগের চিকিৎসাই বহাল রাখেন। আমি আবার আগের মতো করেই ওষুধগুলো খেতে থাকি। কমে যায় কিন্তু ওষুধ না খেলেই বেড়ে যায়। বিশেষ করে, ইনজেকশন না দিলে। ডাক্তার দিতে বলেছিলো ৭টি। কিন্তু আমি বোধ হয় আরও কয়েকটি বেশি দিয়ে ফেলেছিলাম। এতে করে আমার শরীর দূর্বল হয়ে যায়। শরীরে পানি জমে এবং শরীর মোটা হয়ে যায়। তখন আমি আবার ভীষন চিন্তায় পড়ে যাই। এই পর্যন্ত কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার কথা মাথায় আসেনি। শরীর যখন ফুলে গেল তখন আরেকজন অ্যালোপ্যাথিক খুব ভালো মানে নামকরা ডাক্তারের কাছে আমি যাই। তিনিও আমাদের দেবীগঞ্জেই বসতেন। অন্য এলাকা থেকে আসতেন। খুব জনপ্রিয় ডাক্তার ছিলেন তিনি। ডাক্তারের নাম ছিল জাহিদ। বর্তমানে বোধ হয় তিনি ট্রান্সফার হয়ে দিনাজপুরে চলে গিয়েছেন।
উনার কাছে যাওয়ার পর উনি আমাকে দেখে কিছুটা হতবাক হন। বিশেষ করে, শরীর ফুলে যাওয়া দেখে। তিনি তৎক্ষণাৎ আমাকে কিডনী টেষ্ট করার জন্য বলেন। অর্থাৎ ব্লাড টেষ্টের মাধ্যমে নাকি কিডনীর টেষ্ট করা যায়। আমি হিউম্যান ক্লিনিক নামক ক্লিনিক এ গিয়ে সেটা করলাম। খুব ভয়ে ছিলাম। ভাবছিলাম, কিডনীতে না জানি কি হয়েছে। কিন্তু, যখন রিপোর্ট হাতে পেলাম তখন মনটা ভালো হয়ে গেল। ক্লিনিকে যারা রিপোর্ট ডেলিভারী দেয় তারাই বললো যে, আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার কিডনী ভালো আছে। তো, এই ডাক্তার সাহেব আমাকে ঐ ট্রিমকর্ট ইনজেকশন দিতে নিষেধ করলেন। তিনি খুব কঠোর ভাবে আমাকে নিষেধ করলেন। তারপর কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। সেগুলো আমি খেয়েছি পরে। কিন্তু, খুব একটা উপকার পাইনি। রোগটা বারবার ফিরে আসছিলো। সমস্যা ছিল এই টাই।
এবার আমি নিজেই ইন্টারনেটে রোগটা নিয়ে বিভিন্ন ভাবে খোঁজাখুঁজি শুরু করলাম। এক সময় জানতে পারলাম, সোরিয়াসিস রোগের আসলে তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। বিশেষ করে অ্যালোপ্যাথিতে নেই বললেই চলে। কিছু থেরাপি দেওয়া যায় সেটাও বিদেশে। তারপরেও ভালো হওয়ার ভরসা পুরোপুরি থাকে না। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে এর সমাধান আছে। রোগটাকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অনেক দিন ধের্য্য ধরে যদি কেউ হোমিও ওষুধ সেবন করে তবে অবশ্যই তার রোগ নিয়ন্ত্রণে আসবে ইনশাআল্লাহ। এ জাতীয় বিভিন্ন টপিক্স পড়ার পর আমার মনে বিশ্বাস চলে এলো। আমি ভাবলাম, হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করলে হয়তো আমি পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে যাবো।
কিন্তু এক জায়গায় সমস্যা ছিল। সেটা হচ্ছে, ভালো ডাক্তার কোথায় পাবো? ভালো ডাক্তার তো বড় বড় শহর ছাড়া পাওয়াই যায় না। আশপাশের দু’এক জন ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করালাম কিছুদিন। কিন্তু উপকৃত হচ্ছিলাম না। আপনাদের আগেই বলেছি, আমি বিবাহিত এবং ২০১৪ইং সালের শেষের দিকে আমি বিয়ে করেছি। আমার শশুরবাড়ি ছিল সিট এলাকায়। বর্তমানে অবশ্য সিট এলাকা নেই। কারণ, সরকার সিট বিষয়ক সমস্যার সমাধান করেছে। তো, আমার শশুরবাড়ি এলাকার এক হোমিও ডাক্তার ছিলো। তিনি ডিএইচএমএস কোর্স করা। অবশ্য অভিজ্ঞতা তার যথেষ্ট রয়েছে। আমার স্ত্রী আমাকে অনেকবার বলেছে ঐ ডাক্তারের কথা। কিন্তু আমিই শুনিনি। পরে একদিন আমার স্ত্রী’র কথামতো ঐ ডাক্তারের কাছে যাই। উনি আমাকে ৫ মিনিটের মতো দেখলেন। কিছু কথা শুনলেন। তারপর চিকিৎসা দিলেন। কি কি ওষুধ দিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। কারণ, তখন আমি হোমিওপ্যাথির কিছুই জানি না। এটা ২০১৭ ইং সালের শেষের দিকের কথা।
এই হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের ওষুধ নিয়ম করে আমি খাওয়া শুরু করলাম। আল্লাহর রহমতে ২ মাসের মধ্যে আমি সুস্থ্য হয়ে যাই। এখানে সুস্থ্যতা বলতে আমি আপনাদের বোঝাতে চাচ্ছি যে, আমার রোগটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ডাক্তার সাহেব আমাকে কিছু বিধি নিষেধ বলে দিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো- লাল মাংস অর্থাৎ গরু, খাসি, মহিষ ইত্যাদির মাংস খাওয়া যাবে না। চিংড়ি মাছ, পুটি মাছ, ইলিশ মাছ এগুলো খাওয়া যাবে না। সাবান দিয়ে গোসল করা যাবে না। এক প্রকার শ্যাম্পৃু (কিটোকোনাজল গ্রুপের) দিয়েই গোসল করতাম। নিমপাতা দিয়েও মাঝে মধ্যে গোসল করতাম। আনুষঙ্গিক আরও কিছু নিয়মের কথা উনি আমাকে বলেছিলেন।
পরে অবশ্য আমি বিষয়গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ। যখন আমি ওষুধ খাচ্ছিলাম তখন কিন্তু বুঝতে পারিনী যে, আমি কোন ওষুধ খাচ্ছি। কারণ, হোমিওপ্যাথিতে প্রায় সব ওষুধই লিকুইড। এখানে বোঝার কোনো বুদ্ধি নেই। বুঝেই বা লাভটা কি? আমি সুস্থ্য হয়েছি এটাই হচ্ছে মূল কথা। পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম যে, আমার উপর ‘মেজেরিয়াম’ নামক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। এখানে বলা যাবে না যে, সোরিয়াসিস হলেই মেজেরিয়াম দিয়েই ভালো হবে বা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এটা নির্ভর করবে আপনার শারিরীক লক্ষণের উপর। এখন আমি জানি যে, হোমিওপ্যাথিতে বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে চর্ম রোগের জন্য। একেকটা ওষুধ একেকটা লক্ষণের উপর কাজ করে। ঠিক মতো চিকিৎসা করলে নিয়ন্ত্রণে আসবে ১০০%। যখন আমি পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে গেলাম তখনও মাঝে-মধ্যে একটু ওষুধ সেবন করতাম। তারপর আস্তে আস্তে খাওয়া বন্ধ করি। কিন্তু খাদ্যাভাস সেই আগের মতোই থাকে। অর্থাৎ আমাকে যে খাবারগুলো খেতে নিষেধ করেছিলো সেগুলো আমি খাওয়া বন্ধ রাখি। এখনও স্পেশালি আমি নিয়মগুলো মানার চেষ্টা করি।
যখন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে গেলাম তখন আমার মাথায় এলো আরেকটা জিনিস। আমি ভাবলাম, সোরিয়াসিস দিবস যেহেতু বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় তাহলে তো বিশ্বব্যাপী অনেক রোগী থাকার কথা। ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখলাম যে, আমার ধারণা সঠিক। প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত এই রোগে। আমার তখন একটি ইউটিউব চ্যানেল ছিল ‘আজগর৬২০’ নামে। আমি ভাবলাম, আমার ইতিহাসটা বা সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি পাওয়ার গল্পটা শেয়ার করি। এতে যদি মানুষের একটু উপকার হয়। অন্তত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করলে অনেকেই সুস্থ্য থাকবে এটা আমার বিশ্বাস ছিল।
ভিডিওটি তৈরী করে আপলোড দিলাম। প্রথম দিকে ভিডিওতে আমাকে দেখাইনি। পরে ভাবলাম, না – এরকম ভিডিও দেয়া যাবে না। মানুষ বিশ্বাস করবে না। ভিডিওতে আমি নিজেকে প্রেজেন্ট করবো। তখন আগের ভিডিওটি ডেলেট করে দিই এবং নতুন আরেকটি ভিডিও তৈরী করি যেখানে আমাকে দেখা যাচ্ছিল। ভিডিওটি আপলোড করার পর থেকেই আমি সাড়া পেতে শুরু করি। কারণ, যোগাযোগের সব উপায় সহজ করে দিয়েছিলাম।
বিশেষ করে আমার পার্সোনাল মোবাইল নম্বর (০১৭৭৩-০১৮৯৫৭) শেয়ার করেছিলাম। আপনাদের সুবিধার্থে এখানেও শেয়ার করে দিলাম। প্রথমে এসএমএস করুন এবং তারপর কল করুন।
[এই পোস্ট আরও আপডেট হবে]
Leave a Reply