সানরাইজ৭১ এ আপনাদের স্বাগতম। আজ আমরা আলোচনা করবো গর্ভকাল, প্রসবকাল ও প্রসবের পরবর্তী কয়েকটি রোগের লক্ষণ ও সেগুলোর চিকিৎসা নিয়ে। আর্টিকেলটি অনেক বড় হওয়ায় এটাকে তিনভাগে ভাগ করে নিয়েছি।
তন্মধ্যে এটি হলো দ্বিতীয় পর্ব। একটু সময় নিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়লে অনেক কিছুরই অভিজ্ঞতা পাবেন। তো চলুন শুরু করি।
বুক ধরফড় করাঃ সাধারনত অজীর্ণতার কারণেই গর্ভাবস্থায় বুক ধড়ফড় করে থাকে। এক্ষেত্রে ওষুধ দিতে হবে- নাক্সভমিকা ৬।
যেকোনো কারনে বুক ধড়ফড় করলে দেওয়া যায়- ডিজিটালিস ৩।
প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলেঃ কোনো কারণে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা সামান্য পরিমাণে প্রস্রাব হলে- বেলেডোনা ৬ বা ক্যান্থারিস ৬।
অসাড়ে প্রস্রাব হলেঃ রাত্রিকালে ঘুমোতে ঘুমোতে অসাড়ে প্রস্রাব করে ফেলে অনেকে। এটি গর্ভাবস্থার একটি উপসর্গ। এ রকম ঘটলে খাওয়ানো দরকার- সালফার ৩০ বা কষ্টিকম ৩০।
প্রস্রাবের বেগ ধারণ করা সম্ভব হয় না, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব প্রভৃতি লক্ষণে- বেলেডোনা ৬।
প্রস্রাব যন্ত্রণা থাকলেঃ গর্ভাবস্থায় এই উপসর্গটি অনেকের দেখা দেয়। এক্ষেত্রে দেওয়া উচিত- ক্যান্থারিস ৬ বা স্পিরিট ক্যাম্ফার।
গর্ভাবস্থায় রজঃ নিঃসরণঃ গর্ভসঞ্চার হলে ঋতু বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ব্যতিক্রম হিসাবে যদি কোনো কারণে রজঃ নিঃসরণ ঘটে তাহলে দিতে হবে- ফসফরাস ৬ বা ককিউলাস ৬।
অনিদ্রা বা কম নিদ্রাঃ নিদ্রা না হলে অথবা নিদ্রা খুব কম হলে- কফিয়া ৬।
বেদনার জন্য বা খিল ধরার জন্য এরকম হলে- ভিরেট্রাম অ্যালবাম ৬ বা ক্যামোমিলা ৬।
বেদনা-জনিত কষ্টবোধঃ ভ্রুণের নড়াচড়ার কারণে এ রকম হলে- কোনায়াম ৬ বা আর্নিকা ৩।
হৃৎপিন্ডে বেদনা বোধ হলে- আর্জমেট ৬।
কাশি হলেঃ গর্ভাবস্থায় কাশি হতে থাকলে- নাক্সভমিকা ৬ বা অ্যাকোনাইট ৩।
খাদ্যে বিকৃত ধরণের রুচিঃ পোড়া মাটি, হাঁড়ি-কলসি ভাঙার টুকরো প্রভৃতি খাবার ইচ্ছা হলে- কার্বোভেজ ৬।
খড়িমাটি খাবার ইচ্ছা হলে- ক্যালক্যারিয়া কার্ব ৬।
গাছের পাতা, কাঁচা শাক, কাঁচা আনাজ প্রভৃতি খাবার ইচ্ছা হলে- কার্বোভেজ ৩০।
অর্শ রোগঃ যদিও এটি রোগ তথাপি গর্ভাবস্থায় এটিকে উপসর্গ হিসাবে ধরা হয়। এর ওষুধ- নাক্সভমিকা ৬।
এই অবস্থায় পায়খানা বন্ধ হয়ে গেলে বা অতি কষ্টে সামান্য পায়খানা হলে দিতে হবে- কলিনসোনিয়া ৩x।
পিঠে ও কোমড়ে বেদনাঃ উভয় জায়গায় বা কোনো এক জায়গায় বেদনা হলে- সিপিয়া ৩০ বা ব্রায়োনিয়া ৩।
শোথ হলেঃ শোথ হলে আক্রান্ত স্থলে ঝিন-ঝিন করে বা অসাড় মনে হয়। গর্ভাবস্থায় স্ত্রী-জননতন্ত্রে, পায়ে বা উরুতে এ উপসর্গটি দেখা দেয়। জ্বর সহ এরকম হলে- অ্যাকোনাইট ন্যাপ ৩ (প্রথমে), আর্সেনিক ৬ (পরে)।
রসরক্ত-ক্ষয়ের জন্য হলে- ফেরাম ফস ৬ বা চায়না ৬।
গর্ভাবস্থায় মূর্ছাঃ স্নায়বিক দূর্বলতা, রসরক্ত-ক্ষয় প্রভৃতি কারণে এরকম হয়ে থাকে। স্নায়বিক দূর্বলতার জন্য মূর্ছা গেলে- অ্যাসিড ফস ৬।
শোক-দুঃখের কারণে মূর্ছা গেলে- ইগ্নেসিয়া ৬।
রসরক্ত-ক্ষয়ের জন্য মূর্ছা গেলে- চায়না ৬।
যদি গর্ভাবস্থায় মূর্ছা হয় এবং সেই সঙ্গে আক্ষেপ থাকে তাহলে দিতে হবে- কিউপ্রাম ৬।
এ ধরনের রোগে চোখে-মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিলে উপকার হয়। স্পিরিট ক্যাম্ফার বা মস্কাস শোঁকালেও কাজ হয়।
গর্ভাবস্থায় দাতের বেদনাঃ গর্ভিনীর যদি জ্বর হয় ও তার সঙ্গে দাতের ব্যথা দেখা দেয় তাহলে দিতে হবে- অ্যাকোনাইট ন্যাপ ৩।
স্নায়বিক উত্তেজনার কারণে দাতের ব্যথা হলে- মারকিউরিয়াস ৬ বা ক্রিয়োজোট ৬।
অজীর্ণতা দোষে দাঁতের ব্যথায়- পালসেটিলা ৬।
গর্ভিনীর দাতের ব্যথা যে-কারণেই হোক সর্ব অবস্থায় দেয়া যায়- ম্যাগনেসিয়া কার্ব ৬।
গর্ভপাত কাকে বলে বা গর্ভপাত জিনিসটা কি তা আগে জানা দরকার। গর্ভসঞ্চারের দিন থেকে প্রসবকাল পর্যন্ত মোট সময় লাগে ২৮০ দিন অর্থাৎ ৯ মাস ১০ দিন। যদি কোনো কারণে এই সময়ে আগে ৬ মাসের মধ্যে শিশু বেরিয়ে আসে তাহলে তাকে গর্ভস্রাব বলে।
আর ৭/৮ মাসের মধ্যে যদি এরকম ঘটে তাহলে তাকে অকাল প্রসব বলা হয়। গর্ভস্রাব বা অকাল প্রসব ঘটে থাকে কয়েকটি কারণে। যেমন- মানসিক উত্তেজনা, শারিরীক দূর্বলতা, পেটে চাপ লাগা বা আঘাত লাগা, ভারী জিনিস তোলা, গাড়িতে চড়ে দূর স্থানে যাওয়া, উগ্র ধরনের জোলাপ গ্রহণ প্রভৃতি।
গর্ভপাত হওয়ার আগে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন, শ্লেষ্মা বা রক্ত বের হতে থাকে, গর্ভস্থ বাচ্চা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে মনে হয়, কোমরে ও তলপেটে ব্যথা প্রভৃতি। এরকম লক্ষণ দেখা গেলে গর্ভস্রাব যাতে না ঘটে তার জন্য চিকিৎসা করানো দরকার।
লক্ষণ বুঝে ওষুধ খাওয়ালে গর্ভস্রাব নিবারিত হতে পারে। গর্ভস্রাব বা গর্ভপাতের লক্ষণ যদি ৩ মাসের মধ্যে দেখা যায় (অর্থাৎ শ্লেষ্মা বা রক্ত পড়ে, কোমড়ে বা তলপেটে ব্যথা হয় প্রভৃতি) তাহলে গর্ভিনীকে খাওয়াতে হবে- স্যাবাইনা ৩।
৪ মাস বা তারপরের মাসগুলোতে এ রকম লক্ষণ দেখা গেলে- সিকেলি ৩।
পেটে আঘাত লাগা বা চাপ লাগার কারণে এ রকম হলে- আর্নিকা ৩।
পেটে শূল বেদনার মতো বেদনা হলে বা খামচে-খামচে ধরলে- ভাইবার্নাম অপি ৩x।
প্রসব বেদনা ও মূর্ছা লক্ষণে- পালসেটিলা ৬।
গর্ভস্রাব নিবারণের আরেকটি উৎকৃষ্ট ওষুধ- সিকেলি ৩।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি, বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন।
এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
[বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।]
Leave a Reply