আমাদের এই ওয়েবসাইটে যারা এখন পর্যন্ত ভিজিট করেছেন তারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, এই ওয়েবসাইটে অনেকগুলো মিনুবার আছে। এতগুলো মিনুবার কিন্তু এমনি এমনি তৈরী করিনী। আসলে প্রয়োজন আছে তাই। জীবনে চলার পথে অনেকেই অনেক কিছু করে। প্রত্যেকটি মানুষ ইনিডিভিজুয়ালী কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা জীবনে অর্জন করেই। এই যে আপনি এই লেখা পড়ছেন – হয়তো এ ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা আছে কিনা জানি না কিন্তু কোনো না কোনো ব্যাপারে তো আপনার অভিজ্ঞতা আছে।
কারও ভ্রমণে অভিজ্ঞতা আছে, কারও মেয়ে পটানো অভিজ্ঞতা আছে, কেউ গাড়ি চালাতে পারে ভালো, কেউ বাজারে গিয়ে কিছুটা কম দামে খরচ করতে পারে। আরও অনেক কিছু্। ঠিক আমিও আমার একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।
আমি হোমিওপ্যাথির সাথে যুক্ত প্রায় ২ বছর থেকে। ডিএইচএমএস কোর্সে পড়ছি। আর জেনারেলে মাস্টার্স করছি। আমি বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রেখেছি। অন্তত আমার নিজের পরিবার ও আশপাশের মানুষগুলো যাতে একটু সুবিধা পায়। এতে করে আমার দক্ষতাও একটু বাড়তে থাকবে এটা মনে করেই আমি বাড়িতে এই ব্যবস্থা করেছি। মনে করবেন না আবার যে, না শিখেই এমনটা করছি। সামান্য হলেও শিখেছি। আমার তেমন প্রাকটিক্যাল জ্ঞান নেই কিন্তু আমার স্ত্রীর প্রায় ২ বছরের প্রাকটিক্যাল জ্ঞান আছে। ও আমাকে হেল্প করে। তাছাড়া, ভালো ভালো হোমিওপ্যাথিক বেশ কয়েকটি বই আমার কাছে আছে যা আমি নিয়মিত ফলো করি ও পড়ি।
বাড়িতে ওষুধ নিয়ে আসার পর বেশ কয়েকদিন পর থেকেই আশপাশ থেকে কিছু মানুষ আসতে শুরু করলো। সাধারন সমস্যা নিয়ে আসে। আমিও মোটামুটি বইগুলো দেখে ও আমার স্ত্রীর সহযোগিতায় ট্রিটমেন্ট দেই। কোনো কঠিন রোগ নয়, যেমন ধরেন – সর্দি, কাশি, শরীর ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, আচিল এই প্রকার আর কি। কেউ কেউ টাকা দিয়ে যায় আবার কেউ কেউ বাকি নিয়ে যায়।
আমি আবার খোঁজ নেই। যেহেতু আশেপাশেরই সবাই, তাই খোঁজ নিতে আমাকে কোনো বেগ পোহাতে হয় না। কিন্তু টাকা চাই না। সামান্য কিছু টাকা সেটাতো দিয়েই যাবে। এটা মনে করে আর চাই না। হাতে গোনা কয়েকজন কিছু দিন মানে ১ মাস পরে বা আরও পরে কেউবা ১৫ দিন পরে কিছু টাকা দিয়ে যায়। মানে যা বাকি নিয়েছিল তার অর্ধেক টাকা দিয়ে যায়।
কেউ কেউ এসে অবজেকশন করে বসে “কি ওষুধ দিয়েছেন? আপনার ওষুধ তো কোনো কাজই করলো না”। আমার ওষুধ কাজ করেনি। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাহলে উনাকে আমি হয়তো ওষুধ পাল্টে দেব কিংবা পাওয়ার চেঞ্জ করে দেব কিংবা আবার কেইস টেকিং করবো। কিছু না কিছু তো করবো। সমস্যাগুলো তো আর খুব জটিল না। কিন্তু বেচারা উপরে বোল্ড করা লেখাটা মুখ দিয়ে বলে চলে গেল। আমি যে টাকা পাই সেটার কোন খবরই নাই। সেটার কথাও বললো না। কেউ কেউ বলেই ফেলে, “ওষুধে তো কাজ করে নাই – টাকা দিমু ক্যামনে”?
দেখুন, ওষুধটা কিন্তু বাকি দিয়েছিলাম। আমি তো আর ওষুধগুলো ফ্রি নিয়ে আসি না। আমাকে তো টাকা দিয়ে আনতে হয়। কিন্তু যারা নগদ নিয়ে যায় তারা কখনো এভাবে বলেনি কোনো সময়। তাদের কিছু না কিছু কাজ হয় অবশ্যই। আমার এই ২ বছরের অভিজ্ঞতায় নগদ ওষুধ নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যক্তি এভাবে বলেনি।
আসলে, অভিজ্ঞতা হিসেবে আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো, যখন আপনি কাউকে ওষুধ বাকি দেবেন তখন ফাঁকি পাবেন এটাই স্বাভাবিক। সবার ক্ষেত্রে নয় কিন্তু পাবেন নিশ্চয়ই। ওষুধ বাকি দিলে ওষুধ কাজ করে কম। আপনি যদি ডাক্তার হয়ে থাকেন তবে ১০ জন পেশেইন্ট কে বাকি দিয়ে দেখুন। তারপর ওষুধের ফলাফল দেখুন। আপনি রোগী বাছাই করে বাকি দিবেন না কিন্তু। যারা আপনার কাছে বাকি চাইবে তাদেরকেই কেবল দিবেন। ফলাফলটা আমার আর বলার দরকার নাই। আপনি তখন নিজেই বুঝবেন যে বাকি দিলে আপনার ওষুধ কেমন কাজ করে।
শহরের শিক্ষিত মানুষরা একটু হলেও বুঝে। কিন্তু গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ অবুঝ। অর্থাৎ এরা আসলে জানে না হোমিওপ্যাথি আর অ্যালোপ্যাথির মধ্যে তফাৎটা কি? আবার, গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই মনে করে, হোমিও ওষুধের দাম খুব কম। তাই ভালো মানের ওষুধ দিয়ে যদি লিগাল টাকা চাওয়া হয় তবুও বেশি হয়ে যায়। অন্যদিকে, ১০০ টাকার ইনজেকশান যদি ৫০০ টাকা নেয়া হয় তবুও তখন কিছু বলতে পারে না।
সো, আমি বলতে চাচ্ছি, যারা ওষুধ বিক্রি করেন (ডাক্তার হিসেবে) তারা চেষ্টা করবেন বাকি না দেয়ার জন্য। আমি বলছি না যে, কাউকেই দেবেন না। মানুষ চিনে বাকি দিবেন। এতে আপনার প্রফেশনের কোনো ক্ষতি হবে না বরং আপনার আত্মসম্মান এবং মর্যাদা দুই-ই অক্ষূন্য থাকবে।
আমি যখন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালে ট্রেনিং করি, সেখানে আমাদের একজন ট্রেইনার ছিল যিনি এসকেএফ এ ২৭ বছর ধরে চাকুরী করছেন। উনি কিন্তু এমবিবিএস ডাক্তারদেরও প্রশিক্ষণ দেন মাঝে মাঝে। উনি সত্যিই একজন অসাধারন প্রতিভাধর ব্যক্তি। এই চাকুরীর পাশাপাশি উনি হোমিওপ্যাথিও প্রাকটিস করতেন। ঢাকার খুব নামকরা একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে প্রশিক্ষণ নিতেন। যেদিন আমাদের সমাপ্তি ক্লাস সেদিন তিনি ক্লাসের ফাকে একসময় আমাদেরকে বললেন “তোমরা তো ওষুধ কোম্পানীতে চাকুরী করবে। তোমাদের কাছে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ওষুধের স্যাম্পল থাকবে। তাই বলে শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিলেই অ্যালোপ্যাথিক এই ওষুধগুলো খেয়ো না। আগে হোমিওপ্যাথিতে যেও। তারপর যদি পেরে না ওঠো তবে অ্যালোপ্যাথি খেয়ে নিও।” কথাটা আমার খুব মনে পড়ে। ঢাকার বনানীতে এসকেএফ এর হেড অফিসের যতো চাকুরীজীবি আছেন সবাই এই স্যারের হোমিও ওষুধ মাঝে মধ্যে খান। অনেকে খুব ভালো ফলাফলও পেয়েছেন।
সুতরাং, এই কাহিনীটি এজন্যই বললাম যে, যারা শিক্ষিত তারা যে লাইনেরই হোক, যেখানেই থাকুক – সত্য কে তারা সত্য বলেই মেনে নেবে। আমি প্রকৃত শিক্ষিত মানুষের কথা বলছি। দুই একটা ব্লগ আছে যেখানে হোমিওপ্যাথির বদনাম গাওয়া হয়। তারা আসলে বিশেষ ধরনের জ্ঞানী ব্যক্তি। গুণধুর ব্যক্তি। ওদের সাথে নাস্তিকদের কিছুটা মিল আছে। নাস্তিকরা যেমন সত্য কে সত্য বলে মেনে নেয় না – যেভাবেই বোঝান না কেন তারা মানবে না ঠিক এমন এরাও।
তো, এরকম উচ্চ শিক্ষিত হয়েও কেউ কেউ সত্যটাকে সত্য হিসাবে মেনে নেয় না আর যারা একেবারেই মুর্খ তারা কিভাবে মানতে পারে?
এসকেএফ এর কথা বলেছি। আরেকটু বলা দরকার। ফ্যামিলির অর্থনৈতিক সমস্যার কথা চিন্তা করে এই কোম্পানীতে আমি এমপিও পদে চাকুরী নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে চাকুরীরত অবস্থায় বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হই। বিশেষ করে আন্ডার রেট। ৩০,০০০ টাকা স্যালারী কিন্তু ৫-১০% আন্ডার রেট এবং টারগেট প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। এখন আপনারাই হিসাব করেন। ওদিকে মাসের রুম ভাড়া, নাস্তাবিল, ঘোরাঘুরি খরচ, ডাক্তারের পিছনে খরচ ইত্যাদি। সব মিলে বুঝতে পারলাম যে, এটার তেমন ভবিষ্যত নেই। তাই আমি চাকুরীটা বাদ দেই। আর হোমিওপ্যাথিতে মনোনিবেশ করেছি। মনের একটাই ইচ্ছা, হোমিওপ্যাথির জ্ঞান অর্জন করে মানুষের সেবা করতে চাই। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছি, মানুষকে আবোল-তাবোল ভাবে কখনো বাকি দেব না। নিজের সম্মান নিজেই নষ্ট করতে পারবো না।
তো আজ আর নয়। আরও কোনো নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে আগামী দিনে। সেই সময় অবধি সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। এখনো করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবা আমাদের গ্রাস করেই চলেছে। সুতরাং সাবধানে থাকুন। নিজের সন্তানদের চোখে চোখে রাখুন। সাবান পানি দিয়ে বারবার হাত ধৌত করুন। সর্বোপরি, সরকার প্রদত্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলুন বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
[বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল হোমিওপ্যাথি সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারিরীক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।]
Leave a Reply