দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় অবস্থিত ‘জীবন মহল’ নামের একটি বিনোদন পার্ককে ঘিরে বড় ধরনের সংঘর্ষ, হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট ২০২৫) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই সহিংসতায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন সংবাদকর্মীও রয়েছেন।
ঘটনার বিস্তারিত
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, বিকেল আড়াইটার দিকে পার্কের মূল ফটকের সামনে প্রথমে সমাবেশ শুরু হয়। আনোয়ার হোসেন ওরফে জীবন চৌধুরীর সমর্থকেরা সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। অপরদিকে, স্থানীয় তৌহিদি জনতা একই সময়ে সেখানে বিক্ষোভ ডাক দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এ সময় সুযোগ নিয়ে কিছু লোক বিনোদন পার্কে প্রবেশ করে মালামাল লুটপাট করে এবং পার্কের ভেতরে অগ্নিসংযোগ করে। এতে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়।
সংঘর্ষের পটভূমি
গত ১৭ আগস্ট জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে ‘জীবন মহল’ পার্কে অভিযান চালায়। ওই অভিযানে দুজন নারী ও পাঁচজন পুরুষকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি পার্কের মালিক আনোয়ার হোসেনকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর থেকে পার্কে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে এটিকে ‘অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেন।
উভয় পক্ষের বক্তব্য
পার্কের মালিক আনোয়ার হোসেন (জীবন চৌধুরী) দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে তাঁর প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি জানান।
অন্যদিকে তৌহিদি জনতার নেতা মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, জীবন মহলে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ ও অসামাজিক কাজ চলছে। তাঁরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নিলেও আনোয়ার হোসেনের সমর্থকেরা হামলা চালান। এতে তাঁদের সাতজন আহত হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
ঘটনার পরপরই পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন জানান, এর আগেও সেখানে প্রশাসনের অভিযানে দণ্ড ও জরিমানা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, “যে কোনো পক্ষ মামলা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ
ঘটনার পর আনোয়ার হোসেনের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করেন। তবে প্রশাসনের আশ্বাসে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেয়।
উপসংহার
দিনাজপুরের এই ঘটনা শুধু একটি বিনোদন পার্ককে কেন্দ্র করে নয়, বরং স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ, অভিযোগ এবং পাল্টা-প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ। একদিকে অপপ্রচারের অভিযোগ, অন্যদিকে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ—এ দুই পক্ষের সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসনের কার্যকর ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষক ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে