ঢাকার একটি আদালতকক্ষে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় জামিন শুনানি চলাকালে এজলাসে বিচারকের সামনেই মারধরের শিকার হয়েছেন সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম। এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জামিন শুনানিতে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাস পিয়াস সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান পান্নার জামিন আবেদনের শুনানি নেন। তবে আদালত তাদের জামিন নাকচ করে দেন।
এই শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত কক্ষে একাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। দুপুর প্রায় তিনটার দিকে যখন সাংবাদিক পান্নাকে আদালতের ৩০ নম্বর এজলাসে তোলা হয়, তখন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আদালত কক্ষে সাংবাদিককে মারধর
শুনানির একপর্যায়ে সাংবাদিকদের একজন আসামির সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় এক আইনজীবীর সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই আরেক সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম সহকর্মীর পক্ষ নিয়ে কথা বললে ঘটনাটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। অভিযোগ অনুযায়ী, কয়েকজন আইনজীবী এলোপাতাড়ি ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে আহত করেন। তিনি আদালতকক্ষে নিজের হাতে থাকা মাইক্রোফোন তুলে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও ততক্ষণে কয়েকজন আইনজীবী তাকে টেনে নিয়ে মারধর চালাতে থাকেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিচারক খাস কামরায় চলে যান। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন নয়ন এগিয়ে এসে আহত সাংবাদিককে উদ্ধার করেন এবং নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। আহত সিয়ামকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের বয়ান
আহত সাংবাদিক আসিফ সিয়াম জানান, জামিন শুনানির আগে বিচারক স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে আদালত কক্ষে আইনজীবী ও সাংবাদিক ছাড়া অন্য কেউ থাকতে পারবেন না। এর পরও কিছু আইনজীবী সাংবাদিকদের বেরিয়ে যেতে বলেন। তিনি এর প্রতিবাদ করলে আইনজীবী মহিউদ্দিন ও তার সহযোগীরা হামলা চালান।
সাংবাদিক সমাজের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)। সংগঠনের সভাপতি হাসান জাবেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, আদালত কক্ষে একজন সাংবাদিকের ওপর প্রকাশ্যে হামলা শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং এটি দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর এক ভয়াবহ আঘাত। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
কেন এই ঘটনা উদ্বেগজনক?
আদালত দেশের বিচার ব্যবস্থার অন্যতম নিরাপদ স্থান। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এটি শুধু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং বিচারপ্রার্থীদের আস্থার জায়গাটিকেও নড়বড়ে করে দিচ্ছে।
উপসংহার
সাংবাদিকরা গণমানুষের কণ্ঠস্বর। আদালত কক্ষের মতো সংবেদনশীল স্থানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ধরনের ঘটনা শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, গণতন্ত্র ও মুক্ত সাংবাদিকতার জন্যও হুমকির বার্তা বহন করে। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরি।