গত কয়েক মাস ধরে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডার পর এবার অস্ট্রেলিয়াও এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত: কী বলছে সরকার?
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এক সরকারি সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ জানান, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অস্ট্রেলিয়া সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তিনি বলেন, “এটি আমাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত এবং এ জন্য অন্য কোনো দেশের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।” তবে তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, এই স্বীকৃতির সঙ্গে কিছু শর্ত জড়িত থাকবে, যেমন:
-
ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
-
হামাসকে গাজা থেকে সরে যেতে বাধ্য করা
-
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার করা
এই শর্তগুলো পূরণ না হলে অস্ট্রেলিয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাও করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক চাপ ও আলোচনা
গত কয়েক সপ্তাহে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার ওপরও এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ ইতিমধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ও সম্ভাব্য ঘোষণা
আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন হতে যাচ্ছে। এই অধিবেশনের আগেই অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যও একই সময়ে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রই হবে একমাত্র বড় পশ্চিমা শক্তি, যারা এখনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
বর্তমান বিশ্বে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি: কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন দেশ?
বর্তমানে ১৪০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চীন ও রাশিয়া ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক ইঙ্গিতগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
এই স্বীকৃতির প্রভাব কী হতে পারে?
যদি অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে এর কূটনৈতিক প্রভাব ব্যাপক হতে পারে। বিশেষ করে:
-
ইসরায়েলের ওপর চাপ বৃদ্ধি – ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি বাড়লে ইসরায়েলকে দুই রাষ্ট্রের সমাধান মেনে নিতে বাধ্য করা হতে পারে।
-
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান – বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরোধী। যদি অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ওয়াশিংটনের অবস্থান আরও বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
-
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া – এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধানের পথে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
সর্বশেষ অবস্থা: কী হতে পারে আগামী দিনে?
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি তাদের এজেন্ডায় রয়েছে। তবে এটি কবে এবং কী শর্তে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেই হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই আশা করছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি বাড়লে দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ সুগম হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল, হামাস এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী হবে, তা এখনও দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: উত্তরায় চাকরির লোভ দেখিয়ে নারী নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪ জন