বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন সবসময়ই নানা ধরনের আলোচনায় সরগরম থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী নেতা এবং ব্যবসায়ী মহলের গোপন বৈঠক নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের একাধিক বিদেশ সফর এবং তার সাথে পলাতক নেতাদের গোপন বৈঠকের খবর প্রকাশ্যে আসার পর নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
গোপন বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু দিল্লি
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এস আলম সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের সাথে দেখা করেন। এ সফরের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল কিভাবে দলটিকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা যায় এবং সেই প্রক্রিয়ায় কীভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হবে। জানা গেছে, এই বৈঠকে বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল করার নানা পরিকল্পনাও গৃহীত হয়।
বিশ্বস্ত সূত্র দাবি করছে, দিল্লিতে এস আলম সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সাথে বৈঠক করেন। এরপর গোপনে দেখা করেন শেখ হাসিনার সাথেও। এই বৈঠক ঘিরে নানা গোপন তথ্য ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে।
বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ
খবরে জানা যায়, দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেখ হাসিনাকে বিপুল অঙ্কের টাকা হস্তান্তর করেন এস আলম। প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত দুই হাজার কোটি টাকা পরবর্তীতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এই অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট খাত নির্ধারণ করা হয়। যেমন:
আন্তর্জাতিক লবিং – বিদেশি নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করা।
অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি – দেশজুড়ে নাশকতা ও আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলা।
প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তার – সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা।
জামিন ও আইনি খরচ – দলের নেতাকর্মীদের জামিনে সহায়তা প্রদান।
শ্রমিক নেটওয়ার্ক সক্রিয়করণ – এস আলম গ্রুপের অধীন শ্রমিকদের ব্যবহার করে আন্দোলন সংগঠিত করা।
সৌদি আরব ও মক্কার বৈঠক
এর আগে ২ আগস্ট উমরাহ পালনের অজুহাতে এস আলম সৌদি আরবে যান। তবে তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক। মক্কার ফেয়ারমন্ট হোটেলে অবস্থানকালে তিনি পলাতক আওয়ামী নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
পরবর্তীতে ৪ আগস্ট তিনি মদিনায় গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দলের প্রভাবশালীদের সাথে বৈঠক করেন।
মুম্বাই হয়ে আবার দিল্লি
দিল্লিতে একাধিক বৈঠকের পর তিনি ১১ আগস্ট মুম্বাই যান চিকিৎসার জন্য। ১৫ আগস্ট চিকিৎসা শেষ করে আবার দিল্লি ফিরে আসেন এবং ১৬ আগস্ট শেখ হাসিনার সাথে শেষবারের মতো দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন। ১৭ আগস্ট তিনি সিঙ্গাপুরে ফিরে যান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার এবং তা দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তাদের মতে, বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যবহার করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। এ কারণে সরকারের উচিত এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উপসংহার
এস আলমের বিদেশ সফর ও শেখ হাসিনার সাথে একাধিক গোপন বৈঠক নিয়ে যে তথ্যগুলো প্রকাশ্যে এসেছে, তা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন করে অস্থিতিশীল করার আশঙ্কা তৈরি করছে। বিপুল অর্থের লেনদেন, বিদেশি লবিং এবং দেশবিরোধী পরিকল্পনা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য এটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জনগণের সচেতনতা, স্বচ্ছ তদন্ত এবং কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া এ ধরনের ষড়যন্ত্র ঠেকানো সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: তৌহিদ আফ্রিদি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় যেসব তথ্য ফাঁস করলেন