বাংলাদেশের বিনোদন জগতে রাজনীতির প্রভাব অনেক বেশি। বিশেষ করে দেশের শিল্পী সমাজের অনেকেই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে সরকারের পরিবর্তনের পর অনেকেই অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছেন। এই অবস্থার মধ্যে পড়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনও। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজে তিনি খোলাখুলি আলোচনা করেছেন নিজের কাজ ও রাজনীতির অবস্থান নিয়ে।
কাজ হারানো ও প্রযোজকদের অবস্থান
বাঁধন প্রকাশ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তার তিনটি কাজ বাতিল হয়েছে। প্রযোজকরা, যারা আগে তার সঙ্গে কাজ করতেন, এখন আর তাকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী নন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতীয় একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্যও তাকে রাখা হয়নি। তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশের পক্ষেই কথা বলেছি, তাই হয়তো আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও তারা অন্য যুক্তিও দেখিয়েছে—জরিপে এসেছে যে আমাকে মানুষ চেনে না।”
তিনি আরও জানান, তার সব প্রযোজক আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত, আর এখন তারা তার সঙ্গে কাজ করতে চাইছেন না। “আমার হাতে এখন কোনো কাজ নেই। সাদও তার নতুন কাজে আমাকে নেননি। আমরা প্রত্যেকেই নিজের পথে এগোচ্ছি। আমি বর্তমানে কোনো চলচ্চিত্র বা বিজ্ঞাপন প্রজেক্টে যুক্ত নই।”
নতুন প্রজেক্ট ও নিজের অবস্থান
বাঁধন বলেছেন, নতুন প্রজেক্টের জন্য বহু অফার এসেছে, কিন্তু তিনি সেগুলো গ্রহণ করেননি। “ছোটবেলা থেকেই শোনা যে আমাকে দিয়ে রাজনীতি হবে, কিন্তু আমি সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছি। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, দাঁড়াব। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হব না।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রখ্যাত চরিত্র “রেহানা” তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। আগে তিনি ভেবেছিলেন রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন, কিন্তু অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি উপলব্ধি করেছেন নিজের সৃষ্টিশীলতা ও মানুষের জন্য কাজ করাই তার মূল লক্ষ্য।
রাজনৈতিক জীবনের প্রতিফলন
ফেসবুকে বাঁধন লিখেছেন, “আনিসুল হকের নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করেছি, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়ও যুক্ত ছিলাম। ২০১৭ সালে ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। তখন সত্যিই ভাবতাম, রাজনীতি সমাজ পরিবর্তনের পথ। তবে সময়ের সঙ্গে বুঝেছি, রাজনীতি আমার কাজ নয়। স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি, একবার সেই স্বাধীনতা পেলে অন্ধভাবে অন্যের নির্দেশ মেনে চলা সম্ভব নয়।”
তিনি আরও যোগ করেছেন, “রাজনীতি কঠিন কাজ। অনেক রাজনীতিককে কাছ থেকে দেখেছি, কেউ কেউ আমাকে মুগ্ধও করেছেন। কিন্তু আমি সেই পথে যাব না। আমি আমার শিল্পী জীবন ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করাই আমার মূল লক্ষ্য।”
পরিশেষে বলা যায়,
এভাবে বাঁধন স্পষ্ট করেছেন যে, সরকারের পরিবর্তনের প্রভাব তার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে পড়েছে। তবুও তিনি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, মানুষের জন্য কাজ করতে তিনি সবসময় প্রস্তুত থাকবেন, কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হবেন না। এই বার্তা শিল্পী সমাজের জন্যও প্রাসঙ্গিক, যেখানে ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং পেশাগত জীবন কখনও কখনও সংঘর্ষের মুখে পড়ে।
আরও পড়ুন: কেন বিয়েতে রাজি ছিলেন না মুনমুন, জানালেন নিজেই | জামিল-মুনমুন বিয়ে