বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এটি একটি অনন্য অর্জন। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর আবারও ইংলিশ চ্যানেল জয় করলেন দুই বাঙালি সাঁতারু—মাহফিজুর রহমান সাগর এবং নাজমুল হক হিমেল। এই দুই সাহসী তরুণ এক স্বপ্নপূরণের অভিযানে নামেন এবং সফলভাবে তা সম্পন্ন করেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
অভিযানের শুরু ও সফলতা
বাংলাদেশ সময় ৩০ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় (স্থানীয় সময় রাত ২:৩০, ইংল্যান্ড), ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের জন্য তারা সাগরে নামেন। এই চ্যালেঞ্জিং পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য তারা অংশ নিয়েছিলেন একটি ছয় সদস্যের রিলে দলে। দলে ছিলেন এক মেক্সিকান ও তিনজন ভারতীয় সাঁতারুও। প্রতিটি সদস্য নির্ধারিত সময় ও দূরত্ব অনুযায়ী সাঁতার কাটেন এবং মোট সময় লেগেছে প্রায় ১২ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
সাগর জানান, “আমি প্রথমে সাগরে নামি এবং নির্ধারিত পথ সাঁতরে পার হই। আমরা সবাই সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই চ্যানেল জয় করি। এটি শুধুই ব্যক্তিগত নয়, দেশের জন্যও এক গর্বের মুহূর্ত।”
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে অটল সংকল্প
ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের বিষয়টি যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি চ্যালেঞ্জিং। শুরুতে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে সাঁতারের নির্ধারিত সময় থাকলেও, বৈরী আবহাওয়ার কারণে একাধিকবার পরিকল্পনা পেছাতে হয়। তবে নিজেদের প্রস্তুতি ও দৃঢ় মনোবল হারাননি এই দুই সাঁতারু। শেষে সঠিক মুহূর্তে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সফলভাবে চ্যানেল পার হন তারা।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অপেক্ষা
ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়াদের নাম দ্রুতই চ্যানেলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও, আনুষ্ঠানিক সনদ পেতে কিছুটা সময় লাগে। এ প্রসঙ্গে সাগর বলেন, “নভেম্বরের মধ্যে আমরা সার্টিফিকেট পেয়ে যাব। তবে নাম ইতোমধ্যেই রেকর্ডে চলে যাবে।”
এক ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার পুনরাবৃত্তি
বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম যিনি এই চ্যানেল জয় করেন, তিনি হলেন কিংবদন্তি ব্রজেন দাস। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ছয়বার এই দুঃসাহসিক অভিযান সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৬৫ সালে আবদুল মালেক ও ১৯৮৭ সালে মোশাররফ হোসেন এই অর্জনে নাম লেখান। দীর্ঘ বিরতির পর সাগর ও হিমেল তাঁদের উত্তরসূরি হিসেবে একই পথ পাড়ি দিয়ে জাতিকে আবার গর্বিত করলেন।
উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে যাওয়া
এই সফল অভিযানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তাদের সহায়তা ছাড়া এতো বড় একটি আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা সহজ হতো না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সাফল্য অর্জনের জন্য এ ধরনের সহযোগিতা ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শেষ কথা
এই সাফল্য শুধুমাত্র দুই ব্যক্তির নয়—এটি গোটা জাতির জন্য এক অনুপ্রেরণা। ইংলিশ চ্যানেল জয় করার মতো সাহস, দক্ষতা ও প্রস্তুতি প্রতিটি ক্রীড়াবিদকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে উৎসাহ জোগায়। আশা করা যায়, সাগর ও হিমেলের এই ইতিহাসগড়া জয় আরও তরুণকে সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজ: মিরপুরে নতুন ইতিহাসের অপেক্ষা