রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা ও বিএনপির আয়-ব্যয়ের হিসাব
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, বিএনপি ২০২৪ সালে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪২ টাকা আয় করেছে। দলটির ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৮২০ টাকা, যার ফলে ১০ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ১৯ টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এটি বিএনপির আর্থিক অবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি, কারণ ২০২৩ সালে তাদের আয় ছিল মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা।
বিএনপির আয়-ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র
বছর | আয় (টাকায়) | ব্যয় (টাকায়) | উদ্বৃত্ত (টাকায়) |
---|---|---|---|
২০২২ | ৫.৯২ কোটি | ৩.৮৮ কোটি | ২.০৪ কোটি |
২০২৩ | ১.১০ কোটি | ৩.৬৫ কোটি | (২.৫৫ কোটি ঘাটতি) |
২০২৪ | ১৫.৬৫ কোটি | ৪.৮০ কোটি | ১০.৮৫ কোটি |
সারণি থেকে স্পষ্ট, বিএনপির আয় ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আয় বৃদ্ধির কারণ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানিয়েছেন, দলের আয় বৃদ্ধির পেছনে সদস্যদের চাঁদা, অনুদান এবং বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থপ্রবাহ ভূমিকা রেখেছে। তবে তিনি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, “আগের নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করি, বর্তমান কমিশন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেবে।”
তিনি আরও যোগ করেছেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো উন্নত হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো, কোনো গোষ্ঠী যেন নির্বাচন বানচাল করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।”
রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা: আইনি বাধ্যবাধকতা
বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতি বছর জুলাই মাসের মধ্যে পূর্ববর্তী বছরের আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এই প্রতিবেদন অবশ্যই স্বীকৃত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্ম দ্বারা অডিট করে জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে, ২০২৪ সালের হিসাব ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য ৫০টি নিবন্ধিত দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বর্তমানে স্থগিত থাকায় তাদের এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হয়নি।
কী হয় যদি কোনো দল হিসাব জমা না দেয়?
-
পরপর তিন বছর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে।
-
আর্থিক অস্বচ্ছতার কারণে দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এবং ভোটারদের আস্থা কমে।
উপসংহার: আর্থিক স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্র
রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বিএনপির আয় বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও, এই অর্থের উৎস ও ব্যয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। নির্বাচন কমিশনের কঠোর নজরদারি এবং দলগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে আরও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
আপনার মতামত জানান:
-
আপনি কি মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়ানো উচিত?
-
বিএনপির আয় বৃদ্ধিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আরও পড়ুন: হাসানাহ ফাউন্ডেশনে চাকরির সুযোগ: ১০ পদে নিয়োগ, আকর্ষণীয় বেতন ও সুবিধা
নিচে কমেন্ট করে আপনার ভাবনা শেয়ার করুন!