বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) এবং দেশের অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের তিন দফা দাবির পক্ষে ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ (Complete Shutdown) ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, রাজধানীর শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
BUET শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূচনা
গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। পরদিন বুধবার সকাল থেকে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি হাতে নেয়। সকাল ১১টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধের পর শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘জমুনা’র দিকে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হয়। তবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পুলিশ তাদের আটকানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, পানির কামান ও লাঠিচার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে। এতে বহু শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে তারা পুনরায় শাহবাগে অবস্থান নেয় এবং রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে থেকে কর্মসূচি চালায়।
BUET ক্যাম্পাসে নীরবতা
বৃহস্পতিবার সকালে BUET ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই। যদিও এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তারপরও পরীক্ষার কারণে সাধারণত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকে। কিন্তু চলমান আন্দোলনের কারণে পরীক্ষাও বর্জন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নিরাপত্তা কর্মীরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই অফিসে এসেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স রাইটস মুভমেন্টের ঘোষণা
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স রাইটস মুভমেন্ট বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে এই ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। সংগঠনের সভাপতি ওয়ালী উল্লাহ জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (IEB) মিলনায়তনে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ ঘোষণা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি
শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরেছে—
নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ শুধুমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে হতে হবে এবং ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে BSc ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকতে হবে।
দশম গ্রেডের পদে বর্তমানে শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সেখানে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদেরও আবেদন করার অনুমতি দিতে হবে।
কেবলমাত্র যারা BSc ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছে তারাই আইনগতভাবে “ইঞ্জিনিয়ার” পরিচয়ে কাজ করার অধিকার পাবে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি BSc গ্র্যাজুয়েট এবং ডিপ্লোমা হোল্ডারদের পেশাগত দাবি পর্যালোচনা করবে এবং ভবিষ্যতে একটি সুস্পষ্ট নীতি প্রণয়নের সুপারিশ দেবে।
উপসংহার
BUET শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে এই ধরনের কর্মসূচি ছাড়া বিকল্প নেই। অন্যদিকে সরকারও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজছে। তবে দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাবে, তা এখন পরিষ্কার।
আরও পড়ুন: তৌহিদ আফ্রিদি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় যেসব তথ্য ফাঁস করলেন