সীমান্ত উত্তেজনা চরমে, বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা এবার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক বিএম-২১ (BM-21 Grad) রকেট হামলায় থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরে ১৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জনই নিরীহ বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন ৪৬ জন, যার মধ্যে ১৫ জন থাই সেনাসদস্য। এই সংঘাত এখন আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যেখানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও উঠছে।
কীভাবে শুরু হলো এই সংঘাত?
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধ দশকের পর দশক ধরে চলছে। মূল বিবাদের কেন্দ্রে রয়েছে ১৯০৭ সালের একটি ঐতিহাসিক মানচিত্র এবং ২০০৮ সালে একটি প্রাচীন মন্দির (প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দির) নিয়ে বিরোধ। সম্প্রতি, মে ২০২৫ সালে এক কম্বোডীয় সেনার মৃত্যুর পর উত্তেজনা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
বিএম-২১ রকেট হামলা: কেন এত ভয়ঙ্কর?
কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী রাশিয়ার তৈরি বিএম-২১ “গ্র্যাড” মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম ব্যবহার করছে, যা একসাথে ৪০টি রকেট নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এই রকেটগুলি অত্যন্ত দ্রুতগামী এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে সক্ষম, বিশেষ করে জনবহুল এলাকায় ব্যবহার করলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।
থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর দাবি, কম্বোডিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক এলাকা, স্কুল এবং হাসপাতালে রকেট হামলা চালাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইন লঙ্ঘনের শামিল। থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, “এটি একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই বিষয়টি তুলে ধরব।”
থাইল্যান্ডের পাল্টা হামলা ও সেনা মোতায়েন
কম্বোডিয়ার হামলার জবাবে থাইল্যান্ড তাদের F-16 যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আকাশপথে স্ট্রাইক চালিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় উভয় পক্ষই ট্যাংক, সাঁজোয়া যান এবং ভারী কামান মোতায়েন করেছে। সংঘাত এখন ২১০ কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
কম্বোডিয়ার এক প্রাদেশিক কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের পাল্টা হামলায় কম্বোডিয়ার ১ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
এই সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। চীন ও মালয়েশিয়া শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিলেও থাইল্যান্ড তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্ক
সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। থাইল্যান্ডের ৬৭ বছর বয়সী অং ইং বলেন, “আমরা রকেট হামলার শব্দ শুনে প্রাণভয়ে পালিয়েছি। এখনো মনে হচ্ছে, যেন কোনো মুহূর্তে আবার বিস্ফোরণ হতে পারে।”
কোন পথে সমাধান?
এই সংঘাতের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে হলে উভয় দেশকে আলোচনার টেবিলে ফিরতে হবে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এবং ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা গেলেই কেবল এই রক্তপাত বন্ধ হতে পারে।
শেষ কথা
কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত সংঘাত দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকদের জীবনহানির ঘটনায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। আশা করা যায়, শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে অগ্রসর হয়ে উভয় দেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আতঙ্ক: মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা ও সমাধানের পথ
#থাইল্যান্ড #কম্বোডিয়া #সীমান্তসংঘাত #যুদ্ধাপরাধ #আন্তর্জাতিকসম্প্রদায়