ক্যানসার একটি ভয়াবহ রোগ, বিশেষ করে নারীদের জন্য ডিম্বাশয় (ওভারিয়ান ক্যানসার) ও জরায়ুর ক্যানসার (এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার) অত্যন্ত বিপজ্জনক। সমস্যা হলো, এই ক্যানসারগুলোর প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সাধারণ যে অনেকেই তা উপেক্ষা করে যান। ফলে রোগ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে, যখন চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ে। আজ আমরা আলোচনা করবো এই ক্যানসারগুলোর লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ এবং কোন পরীক্ষাগুলো সময়মতো করালে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
ডিম্বাশয় ও জরায়ু ক্যানসার কেন হয়?
ডিম্বাশয় ও জরায়ুর ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় রয়েছে:
-
বংশগত কারণ: পরিবারে যদি কারও ব্রেস্ট, ওভারিয়ান বা জরায়ুর ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তাহলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
-
বয়স: সাধারণত ৫০ বছরের পর এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
-
হরমোনাল ইমব্যালান্স: ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাব জরায়ু ক্যানসারের একটি বড় কারণ।
-
মেদবহুলতা: অতিরিক্ত ওজন ডিম্বাশয় ও জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
-
রজোনিবৃত্তি পরবর্তী রক্তপাত: মেনোপজের পরেও যদি রক্তস্রাব হয়, তা জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখে সতর্ক হবেন?
ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ:
-
পেট ফুলে যাওয়া বা গ্যাসের সমস্যা: অনেকেই ভাবেন এটি সাধারণ গ্যাসের সমস্যা, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পেট ফাঁপা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ইঙ্গিত দিতে পারে।
-
অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া: বারবার পেট ভরে গেলে বা খেতে অসুবিধা হলে সতর্ক হোন।
-
তলপেটে ব্যথা বা চাপ লাগা: ক্রমাগত পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
-
ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া: প্রস্রাবের চাপ বেড়ে যাওয়া কিন্তু ইউরিন ইনফেকশন না থাকলে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হতে পারে।
জরায়ুর ক্যানসারের লক্ষণ:
-
অস্বাভাবিক রক্তস্রাব: মেনোপজের পরেও রক্তপাত হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।
-
তলপেটে বা পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা: ক্রমাগত ব্যথা জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
-
সাদাস্রাব বা দুর্গন্ধযুক্ত ডিসচার্জ: সাধারণ ইনফেকশন ভেবে এড়িয়ে যাবেন না।
-
যৌনমিলনের সময় ব্যথা: এটি জরায়ু বা সার্ভিকাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
কোন পরীক্ষাগুলো করাবেন?
১. ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড (TVS):
এই পরীক্ষায় যোনিপথে একটি প্রোব ঢুকিয়ে জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের অবস্থা দেখা হয়। এটি ব্যথাহীন এবং খুবই কার্যকরী।
২. পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড:
তলপেটের উপর আল্ট্রাসাউন্ড করে জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখা হয়।
৩. সিএ-১২৫ ব্লাড টেস্ট:
ডিম্বাশয়ের ক্যানসার সন্দেহ থাকলে এই ব্লাড টেস্ট করা হয়। তবে এটি একমাত্র নির্ভরযোগ্য টেস্ট নয়, অন্যান্য পরীক্ষার সঙ্গেও এটি করা হয়।
৪. এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি:
জরায়ুর ভিতরের টিস্যু পরীক্ষা করে ক্যানসার আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
৫. হিস্টেরোস্কোপি:
একটি পাতলা টিউবের মাধ্যমে জরায়ুর ভিতর দেখে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
-
নিয়মিত স্ক্রিনিং: ৩৫-৪০ বছর বয়সের পর নিয়মিত গাইনোকোলজিস্ট দেখান।
-
সুষম খাদ্যাভ্যাস: শাকসবজি, ফলমূল ও ফাইবারযুক্ত খাবার খান।
-
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: এগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
-
হরমোনাল থেরাপি সতর্কভাবে নিন: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া হরমোনাল ওষুধ খাবেন না।
সচেতনতাই বাঁচাতে পারে জীবন
ডিম্বাশয় ও জরায়ুর ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তাই লক্ষণগুলো চিনে রাখুন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলেই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিয়মিত চেকআপ ও সচেতনতাই পারে আপনার প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে।
মনে রাখবেন, ক্যানসার ভয়াবহ হলেও সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে, সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।
এই ব্লগ পোস্টটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন: বর্তমান ভাইরাল জ্বর: আতঙ্ক নয়, সচেতনতাই প্রতিরোধের চাবিকাঠি