বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতে হাজির ও শুনানি
সকালে খায়রুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তার উপস্থিতিতে মামলার শুনানি শুরু হয়। আসামিপক্ষে আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহিন জামিন আবেদন করেন, তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ আবেদনের বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের যুক্তি শোনার পর বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার পটভূমি
গত ৬ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে খায়রুল হকসহ মোট আটজনকে আসামি করা হয়। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন—
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা
সদস্য (অর্থ ও এস্টেট) আ.ই.ম গোলাম কিবরিয়া
সদস্য মো. আবু বক্কার সিকদার
সদস্য (পরিকল্পনা) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার
সদস্য (এস্টেট) আখতার হোসেন ভুইয়া
সাবেক যুগ্ম সচিব ও সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুবুল আলম
সদস্য (প্রশাসন ও ভূমি) নাজমুল হাই
অভিযোগের বিস্তারিত
মামলার নথি অনুযায়ী, রাজধানীর নায়েম রোডে প্রায় ১৮ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা ভবন রয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নামে। অভিযোগ করা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রাজউকের কাছ থেকে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন।
এ অভিযোগে বলা হয়, দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস, ১৯৬৯–এর বিধি ১৩ লঙ্ঘন করে তিনি হলফনামা জমা দেন এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় শর্ত ভঙ্গ করে সুবিধা নেন। বরাদ্দকৃত প্লটের অর্থ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করে তিনি অবসরের পাঁচ বছর পর সুদবিহীনভাবে অর্থ জমা দেন। ফলে সরকারের ক্ষতি হয় প্রায় ৪ লাখ ৭৪ হাজার ২৪০ টাকা, যা আত্মসাতের অভিযোগ হিসেবে আনা হয়েছে।
পূর্ববর্তী গ্রেপ্তারি প্রক্রিয়া
এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। গত ২৪ জুলাই ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেদিনই যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরে ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিতর্কিত রায় দেওয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার এক মামলায় তাকে ভার্চুয়ালি গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আবার ৩০ জুলাই শাহবাগ থানার আরেক মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। রিমান্ড শেষে গত ৭ আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
উপসংহার
দুদকের এই মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ও সংশ্লিষ্ট রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত মামলার শুনানি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি এখন দেশের আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল: শীর্ষ তিন পদে আলোচিত প্রার্থীদের ভোটের হিসাব