দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর লড়াই চালাচ্ছেন কুমিল্লার দুই শিক্ষার্থী রাজিদ আয়মান (২০) এবং হাসিবুল হাসান চৌধুরী (২১)। প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তারা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকলেও এখনও জ্ঞান ফেরেনি। দুর্ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন, যিনি স্কুটি চালাচ্ছিলেন।
কীভাবে ঘটেছিল দুর্ঘটনা
গত ২৭ আগস্ট রাতের ঘটনা। দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজু শহরে স্থানীয় একটি বাজার থেকে ফেরার পথে স্কুটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে তিনজন শিক্ষার্থী। প্রত্যেকেই গুরুতরভাবে আহত হন এবং স্থানীয় পুলিশ তাদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনজনই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকদের ভাষায়, তাদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
আহতদের পরিচয়
গুরুতর আহত রাজিদ আয়মান কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভার ফতেহাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। আরেক শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান চৌধুরী একই উপজেলার ধামতী গ্রামের ছেলে। তারা দুজনেই বন্ধু এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংডং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে তারা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান।
স্কুটি চালক শিহাবের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় হলেও তার শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।
পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে গভীর শোক আর হতাশা। রাজিদের বাবা নান্নু মিয়া, যিনি একজন স্কুল শিক্ষক, চোখের পানি সামলাতে না পেরে বলেন—
“ছোটবেলা থেকেই ছেলের স্বপ্ন ছিল বিদেশে পড়াশোনা করার। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে তাকে পাঠিয়েছি। এখন সে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। সবার কাছে দোয়া চাই, যেন আমার ছেলে সুস্থ হয়ে ফিরে আসে।”
অন্যদিকে হাসিবুলের বাবা ওমর ফারুক চৌধুরী জানান—
“চিকিৎসার খরচ এত বেশি যে আমরা পরিবার নিয়ে দিশেহারা। সবকিছু হারিয়েও যদি ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতাম, তবে সেটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় সুখ। দেশবাসীর কাছে সন্তানের সুস্থতার জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।”
চিকিৎসা ব্যয় ও দুশ্চিন্তা
বিদেশে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দুই শিক্ষার্থী এখনো আইসিইউতে থাকায় খরচ ক্রমেই বাড়ছে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা আর প্রিয় সন্তানকে হারানোর ভয় দুই পরিবারকে শোকে ডুবিয়ে রেখেছে। শুধু পরিবার নয়, তাদের বন্ধু-বান্ধব এবং স্থানীয় মানুষও দোয়া করছেন দ্রুত আরোগ্যের জন্য।
শেষ কথা
দক্ষিণ কোরিয়ায় দুর্ঘটনায় আহত রাজিদ আয়মান ও হাসিবুল হাসান চৌধুরীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করা যেমন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি তাদের সুস্থতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে পরিবার ও স্বজনরা। প্রবাসে স্বপ্ন পূরণের পথে এমন দুর্ঘটনা পরিবারগুলোর জন্য এক দুঃসহ বাস্তবতা বয়ে এনেছে।
আরও পড়ুন: এজলাসে সাংবাদিকের ওপর হামলা: স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকির বার্তা