বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে ফেরার পথে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান Nurul Hasan। ইনজুরি, অস্ত্রোপচার আর দীর্ঘ সময় জাতীয় দল থেকে বাইরে থাকার পরও তিনি হাল ছাড়েননি। তবে এবারের ফেরা তাঁর কাছে আর কোনো আলোচিত কামব্যাক নয়, বরং ক্যারিয়ারে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা তৈরির প্রচেষ্টা।
চোট আর সংগ্রামের গল্প
২০২২ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক থাকাকালীন সময় Nurul Hasan আঙুল ভাঙার বড় ধাক্কা খান। প্রথমে মনে হয়েছিল সাধারণ ইনজুরি, কিন্তু পরবর্তীতে একের পর এক সার্জারি ও সংক্রমণ তাঁকে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে ঠেলে দেয়।
এই ইনজুরির কারণে তিনি শুধু জিম্বাবুয়ে সিরিজই মিস করেননি, এশিয়া কাপও খেলতে পারেননি। দীর্ঘ পুনর্বাসন আর শারীরিক কষ্ট তাঁকে মানসিকভাবেও ভুগিয়েছে। তবে তিনি এটিকে জীবনের অংশ হিসেবেই মেনে নিয়েছেন। তাঁর ভাষায় –
“ইনজুরি জীবনের অংশ। ট্রমা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্নভাবে আসে। আমি এটাকে জীবনের অংশ হিসেবেই নিয়েছি, কোনো অভিযোগ নেই।”
ধীরে ধীরে ফেরা প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে
জাতীয় দলে সুযোগ না পেলেও Nurul Hasan থেমে থাকেননি। দেশীয় লিগ ও ‘বাংলাদেশ এ’ দলের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন এবং ধীরে ধীরে ফর্মে ফেরেন। কয়েক বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে তিনি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও এশিয়া কাপ দলে ডাক পেয়েছেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই প্রত্যাবর্তনে কোনো আবেগী প্রতিক্রিয়া তাঁর মধ্যে নেই। তিনি বলেন –
“দলে ডাক পেলেই খুশি হয়ে যাওয়ার সময়টা শেষ হয়ে গেছে। আজ সুযোগ পেলাম, কাল বাদ পড়লাম – জীবন বা ক্যারিয়ারের সাফল্য এর ওপর নির্ভর করে না।”
স্থিতিশীলতার প্রতি মনোযোগ
Nurul Hasan এবার আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে চান না। তিনি চান ধারাবাহিকভাবে দলে থেকে পারফর্ম করতে। কারণ স্থিতিশীলতা ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন –
“আমি চাই স্থিতিশীল হতে। আমাদের জীবনে অনেক উত্থান-পতন থাকে, কিন্তু স্থিতিশীলতা পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কথায় সহজ শোনালেও বাস্তবে এটা খুব কঠিন।”
বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি
Nurul Hasan মনে করেন, বাংলাদেশের ক্রীড়া সংস্কৃতিতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা কঠিন। ভালো খেললে প্রশংসা, খারাপ খেললে সমালোচনা – এই চক্র তাঁকে আর প্রভাবিত করে না। তিনি নির্লিপ্ত থেকে নিজের খেলার প্রতি মনোযোগী হতে চান।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
এশিয়া কাপ ও নেদারল্যান্ডস সিরিজ Nurul Hasan-এর জন্য নতুন সুযোগ। তাঁর লক্ষ্য শুধু নিজের নাম আলোচনায় রাখা নয়, বরং ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে জাতীয় দলে দীর্ঘমেয়াদী জায়গা নিশ্চিত করা।
চোটের ক্ষত তাঁর শরীরে রয়ে গেছে, কিন্তু মনোবল আরও শক্ত হয়েছে। নীরব প্রত্যাবর্তনই হয়তো তাঁর ক্যারিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
উপসংহার
Nurul Hasan এর গল্প শুধুমাত্র এক ক্রিকেটারের কামব্যাক নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি অঙ্গীকারের উদাহরণ। আলোচনার ঝলকানি নয়, তিনি খুঁজছেন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও ক্যারিয়ারের দীর্ঘস্থায়িত্ব। আগামী দিনগুলোতে তিনি বাংলাদেশের জার্সিতে কতটা সফল হবেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডস টি–টোয়েন্টি সিরিজ ২০২৫: কবে, কোথায় হবে ম্যাচগুলো